চাকরি হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে ওবায়দুল কাদেরকে : রিজভী

প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০১৮

চাকরি হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে ওবায়দুল কাদেরকে : রিজভী

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির ওপর দায় চাপানোর যে দায়িত্বটি ওবায়দুল কাদেরকে দেয়া হয়েছে সেটি পালনে অকার্যকর হওয়ায় তার চাকরি হারানোর ভয় তাকে পেয়ে বসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- বিএনপি এখন দিশেহারা নয়, বেপরোয়াও। জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। আমি ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই- যাদের পায়ের নিচের মাটি থাকে না কেবল তারাই এমন কথা বলতে পারে। আপনাদের মনের ইচ্ছা কী তা আমরা ভালো করেই বুঝি। আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না বলেই আপনি প্রলাপ বকছেন। গত পরশু দিনেও আওয়ামী লীগের পরম সখা এরশাদ সাহেব বলেছেন- আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন শুন্যের কোঠায়।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, রাজনীতি, গণমাধ্যম ও মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করে সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার রাষ্ট্রের সকল স্তম্ভ ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলেছে। এখন পরিকল্পিত নৈরাজ্য তৈরির জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবরা উস্কানি দিচ্ছেন। ভয়ঙ্কর কিছু দুর্ঘটনা সৃষ্টির পরিকল্পনার চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক বেহুঁশ হয়ে খাপছাড়া কথাবার্তা বলছেন। কারণ বিএনপির ওপর দায় চাপানোর যে দায়িত্বটি তাকে দেয়া হয়েছে সেটি পালনে অকার্যকর হওয়ায় তার চাকরি হারানোর ভয় তাকে পেয়ে বসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, এদেশের সকল দুর্গতির জননীই হচ্ছেন শেখ হাসিনা। উনি জনশূন্য এমন একটি দেশ চাচ্ছেন সেখানে তার পরিবার ছাড়া আর কেউ থাকবে না। তিনি শুধু মাটির মালিক থাকতে চান, জনগণকে কবরে পাঠিয়ে। আমি সেজন্য আবারও ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই- নির্দয় নাৎসীদের পতন হলে কিন্তু তাদের আর কোথাও খোঁজ মেলে না। পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের শেষ রক্ষা হয়নি। আপনাদেরও শেষ রক্ষা হবে না।

দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গলাটিপে ধরে নিয়ে গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কীভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারকে গলা চেপে ধরে আটক করে নিয়ে গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু এবং অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান রাজকে টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কীভাবে নির্যাতন করে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরা কোনোক্রমেই রাষ্ট্রীয় বাহিনী হতে পারে না। এদের আওয়ামী পরিচয় ক্রমাগতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বেআইনী অস্ত্রধারী আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীকে এখন র্যা ব-পুলিশে নিয়োগ দিয়ে বিএনপি দমনে বেপরোয়া লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সেই কারণে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে অবলীলায় ঢুকে যেতে পারে পুলিশ। এর আগে কদাচিৎ প্রেসক্লাবের ন্যায় মর্যাদাশীল স্থানে পুলিশ ঢুকলে তার পরিণতি হতো ভয়াবহ, এখন আর সেটি হয় না, কারণ ক্ষমতাসীনদের দাপটে মনে হয় অনেকেই আতঙ্কিত ও উৎকন্ঠিত। মানুষের বাঁচার ইচ্ছা বা বাঁচতে দেয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে সরকারী-সন্ত্রাসীদের হাতে দেয়া হয়েছে।

রিজভী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে আজ আদালতে হাজির করা হবে। আজকেও তাকে পুনরায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন এবং আবেদন মঞ্জুর করা হবে কী না সে বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমান রাজসহ তরুণ নেতাদেরকে রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণের কারণে আমরা এখন শফিউল বারী বাবু, রাজিব আহসান এবং মিজানুর রহমান রাজ এর শারীরিক অবস্থা নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত আছি। আমি দলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই-ধারাবাহিকভাবে আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন এবং আদালত কর্তৃক রিমান্ড জারি ও রিমান্ডে নিয়ে তরুণ নেতৃবৃন্দের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় প্রতিটি আঘাতই প্রত্যাঘাত হয়ে কোনো না কোনোদিন আপনাদের কাছে ফিরে যাবে, এটাই হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর বিচার থেকেও আপনারা রেহাই পাবেন না।

তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ দীর্ঘদিন কারাগারে। তার বিরুদ্ধে একের পর এক নতুন নতুন অসত্য ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, এসব বানোয়াট মামলায় বারবার রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ। বারবার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ফলে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অধ্যাপক মামুন মাহমুদের ওপর এভাবে লাগাতার মিথ্যা মামলা দায়ের ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনার আমি দলের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।

পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিনের বাসায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাকে ও তার স্ত্রীকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই এখন মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এই ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলায় ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। গুরুতর আহত জসিম উদ্দিন এবং তার স্ত্রীর আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া নড়াইল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুন্সি শাহিন উল্লাহ মোহন এবং অ্যাডভোকেট ইশতিয়াক হোসেন মঞ্জুকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি এ ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

রিজভী বলেন, হত্যা আর ঘাতকের মাঝখানে এখন বিএনপিসহ বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের মানুষদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অত্যাচার-নিপীড়ন-লুন্ঠনের প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে। নির্বিচার নিপীড়নে নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। শিশুরা পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ছে। দেশের প্রতিটি মানুষই পুলিশী নজরদারীর মধ্যে রয়েছে, যেন কেউ সরকারবিরোধী আওয়াজ তুলতে না পারে। এটিই হচ্ছে অভিশপ্ত দুঃশাসনের নাৎসীবাদী দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে বহু ক্ষতির জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। সরকারের অত্যাচারে মানুষের মধ্যে ধুমায়িত বহ্নির উত্তাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য জনগণ ক্রমান্বয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হচ্ছে। ক্ষিপ্রগতি অশ্বের হ্রেষাধ্বনি যেমন শত্রুর বক্ষে কম্পন তোলে ঠিক তেমনি জাতীয়তাবাদী শক্তির তরুণরা দুর্ধর্ষ ক্রোধে জ্বলে উঠছে, অভিশপ্ত এই দুঃশাসনকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলার জন্য।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট