বিশ্বকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার প্রতিবাদে সিলেটে এনডিএফের সমাবেশ

প্রকাশিত: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২৫

বিশ্বকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার প্রতিবাদে সিলেটে এনডিএফের সমাবেশ

মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের মদদপুষ্ট ইসরাইল কর্তৃক ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় ইরানের পরমানু বিজ্ঞানীসহ সামরিক ও বেসামরিক শতাধিক নিহত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাল্টা ইরান কর্তৃক ইসরাইলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বিপদের বিরুদ্ধে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনার প্রতিবাদ জানিয়ে ২০ জুন বিকেল ৫টায় সমাবেশ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটি।

জেলা কমিটির অন্যতম নেতা রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে এবং অন্যতম সদস্য আব্দুস সালামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটু, শাহপরান খানা কমিটির সভাপতি খোকন আহমদ, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা কমিটির আহবায়ক শুভ আজাদ শান্ত, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুনু মিয়া সাগর, সমিল শ্রমিক সংঘ সদর উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর আহমদ, মীরেরচক শ্রমজীবী সংঘের আহবায়ক আলী আহমদ সহ প্রমুখ।

বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তির জটিলতার প্রেক্ষাপটে মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক সংকট, চীন-তাইওয়ান দ্বন্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রদর্শন পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দ।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সা¤্রাজ্যবাদীদের মদতপুষ্ট ইসরাইল প্যালেস্টাইনে হামাস নির্মূলের নামে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আগ্রাসন ও গণহত্যা চালালেও জিস্মি মুক্তি, হামাস নির্মূল করে সমগ্র গাজায় প্রমোদনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা কার্যকরী করতে পারেনি। এই আগ্রাসী তৎপরতায় লেবাননের হিজবুল্লাকে বিপর্যস্ত করা, সিরিয়ার নৌ ও বিমান ঘাঁটিসহ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা এবং গোলান মালভূমিতে তাদের অবস্থান অগ্রসর করে ইসরাইল ঘোষিত ‘শয়তানের অক্ষ’কে (এক্সিস অব ইভিল) দূর্বল ও ক্ষতিগ্রস্থ করলেও প্রতিপক্ষ ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স) ও এর মূল নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে অভিযুক্ত ইরানকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় এই ঘটনা ঘটায়। একই সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংক্ষিপ্তযুদ্ধে আমেরিকার এফ ১৫, ফ্রান্সের রাফালসহ পশ্চিমা অস্ত্রের সক্ষমতার বিপরীতে চীনের সস্তা জে ১০সহ অন্যান্য ব্যবহৃত প্রযুক্তির সক্ষমতার সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় পশ্চিমা অস্ত্র প্রযুক্তির সক্ষমতা দেখাতেও ইসরাইলের এ হামলাকে বিবেচনার দাবি রাখে। ইরানও প্রতিপক্ষ ইসরাইলকে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণার প্রেক্ষিতে তৎপর রয়েছে যদিও পারমাণবিক অস্ত্র ও আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ মদদের বিপরীতে চীন-রাশিয়ার কূটনৈতিক সমর্থনের কারণে এটি অসম যুদ্ধ হিসাবেই বিবেচিত। এমন এক প্রেক্ষাপটে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার এবং তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদকে আলোচনায় এনেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরাইল কর্তৃক প্যালেস্টাইনে আগ্রাসন ও গণহত্যা, ভারতের কাশ্মিরের পাহেলগাম ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাক-ভারত যুদ্ধ, সর্বশেষ ইসরাইলের ইরানে হামলা ইত্যাদি ঘটনা বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বরং তা পুঁজি ও শক্তি অনুপাতে বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে আন্তসা¤্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্ধিতা, বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, প্রযুক্তি যুদ্ধ, আঞ্চলিক ও স্থানিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করে চলেছে। এর বিপরীতে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাজনিত পরিস্থিতিতে আন্তসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বদ্বিতা তীব্রতর হয়ে মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতিকে বৃদ্ধি করে জনজীবন বিপর্যস্ত ও অনিশ্চিত করে চলেছে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্বের দেশে দেশে শ্রম-পুঁজির দ্বন্ধ, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্ধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, বিপ্লবের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে চলেছে। নেতৃবৃন্দ আন্তসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী শান্তির জন্য পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী এবং নয়াউপনিবেশিক ও আধাসামন্তবাদী দেশগুলোতে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বিশ্ববিপ্লবের করণীয়কে অগ্রসর করে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সফল করার আহ্বান জানান।

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সর্ম্পকিত না থাকার কথা বললেও কার্যত তার সম্পর্কের দিকটি উন্মোচিত। এই হামলা ও পাল্টা হামলার প্রেক্ষিতে মার্কিনসহ পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীরা ইসরাইলের পক্ষ নেয়, পক্ষান্তরে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া-চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ গুলো মূলত ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

সমাবেশ থেকে আন্তসা¤্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে দুনিয়ার সকল সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী শক্তি ও জনসাধারনের মধ্যে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট