জাবির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির পরিচালক

প্রকাশিত: ৫:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৪

জাবির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির পরিচালক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ডিজি পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর চুক্তি ও বৈদেশিক বিয়োগ শাখার সহকারী সচিব উজ্জ্বল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগের বিষয়ে অধ্যাপক শাহেদুর রহমান জানান, এ নিয়োগের জন্য তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজি খাতে বায়োটেকনোলজিস্ট এর প্রতি হওয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে তাকে বায়োটেকনোলজি খাতের সংস্কার নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য উপদেষ্টাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজি বিষয়ে প্রথম গ্রাজুয়েটদের মধ্যে অন্যতম ডক্টর মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন।

তিনি জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে গবেষক হিসেবে কাজ করেন এবং ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। স্যারের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে বহুল সংখ্যাক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়াও তিনি সমগ্র বাংলাদেশের বায়োটেক গ্রাজুয়েটদের অন্যতম একজন অভিভাবক হিসেবে সুপরিচিত, যিনি বায়োটেক গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া , অধিকার বাস্তবায়নে অভিভাবক হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। যিনি বাংলাদেশে বায়োটেক গবেষণা সুযোগ সৃষ্টি ও বায়োটেক পেশাকে বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বায়োটেকনোলজি বিষয়ক পলিসি সংস্কারের নিরলস ভাবে কাজ করেছেন।

এই নিয়োগে সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি সাবজেক্টের গ্রাজুয়েট ও শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন শাহেদুর রহমান এই পদের জন্য সর্বাধিক যোগ্য এবং তার হাত ধরে বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজি গ্রাজুয়েটদের প্রতি হওয়া বৈষম্যের অবসান হবে এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।

শাহেদুর রহমানের এই নিয়োগের বিষয়ে থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বায়োটেকনোলজি সংশ্লিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

উল্লেখ্য যে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের  সংগঠন  বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের  সদস্য হওয়ার সত্বেও  ডঃ মোহাম্মদ রহমান  শাহেদুর  শুরু থেকেই  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন। তার স্ত্রী বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক  ডক্টর উম্মে  সালমা  জোহরা  ও তার  ছেলে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী  সাদমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া  ১৭ জুলাই  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের  উপর পুলিশ  ও সন্ত্রাসীদের  হামলায়  আক্রান্ত  বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে   নিজ  বাসায়  আশ্রয় দেন।
ওনার বাসায়  আশ্রয়   নেওয়া  ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং  বিভাগের  ৫১তম  ব্যাচের শিক্ষার্থী  জারা খান  ও   আনন   বলেন,  “ওই বিভীষিকাময় রাতে  আমরা কোন জায়গায়  আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।  ওই রাতে   শাহেদ  স্যার    আমাদের সহ  বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী  শিক্ষার্থীদের  নিজ বাসায় আশ্রয় দেন  এবং পরের দিন সকালে  আমাদের বাসায় পৌছিয়ে দেন।“
এছাড়া  ১৭ই জুলাই  জাহাঙ্গীরনগরে   আন্দোলনে অংশ নিতে আসা আক্রমণের শিকার  ব্র্যাক ও ড্যাফোডিল  বিশ্ববিদ্যালয়ের  আনুমানিক ৭০ জন শিক্ষার্থীকে  জাহাঙ্গীরনগর  হাউসিং সোসাইটি    অরুনাপল্লীতে   গেট খুলে দিয়ে   আশ্রয়ের  ব্যবস্থা করে দেন। ঐ রাতে  কর্তব্যরত  অরুনাপল্লীর  গার্ড  শরিফুল ইসলাম বলেন,  ঐদিন রাতে  অনেক শিক্ষার্থী পুলিশের আক্রমণের শিকার হয়ে  আমাদেরকে গেট খুলে দিতে অনুরোধ করেন  কিন্তু ভেতর থেকে পারমিশন না পাওয়ায়  আমরা গেট খুলতে পারছিলাম না।  এ সময় শাহেদুর রহমান স্যার  আমাদেরকে  গেট খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।  এর ফলে শিক্ষার্থীরা  প্রাণে বেঁচে যায়।  অরুনাপল্লীর  সিকিউরিটি সুপারভাইজার  শহিদুল বলেন,  ঐদিন রাতে  আমি যে দেখি  শাহেদুর রহমান স্যার  গেট খুলে দিয়েছেন এবং অনেক শিক্ষার্থী অরুনাপল্লীর ভিতর দিয়ে  নিরাপদে  অন্য রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গিয়েছে  ওই দিন এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও স্যার নিজে ঝুঁকি   নিয়ে  গেট না খুলে দিলে  হয়তো তাদের বাঁচানো সম্ভব হতো না।
এছাড়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে  আলোচিত হওয়া  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি শামীমা  সুলতানার   বিপক্ষে  দেওয়া বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের বিবৃতির  প্রতিবাদ জানিয়ে ৩ আগস্ট ডক্টর শাহেদ  তিনি লেখেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন-কে কেন্দ্র করে কিছু কিছু বিবৃতিতে আমার নাম আমাকে না জানিয়েই দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এরকম ঘটনায় আমার মত আমার ছাত্র -ছাত্রী-শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও ব্যথিত করেছে। আমার জ্ঞানতঃ আমি কখনো অন্যায়ের পক্ষে ছিলাম না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন – একটি ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, মেধাবীদের মূল্যায়নের আন্দোলন, আমি সব সময় ন্যায়ের পক্ষে। আমি মেধাবীদের পক্ষে।“


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট