১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:০৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
চরম দুর্দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের পরিবার। চারদিকে অন্ধকার, একের পর এক ঝামেলা ঘিরে ধরছে। কোনো দিকেই আশার আলো নেই। কোনোমতেই যেন এই দুর্দিন কাটছে না।
বয়স ৭১, বিধবা হয়েছেন ৩৬ বছর বয়সেই। অবুঝ দুই ছেলেকে নিয়ে পথচলা শুরু। এরপর নিয়তির ডাকেই রাজনীতিতে আসা। দলে স্বামীর শূন্যতা পূরণে নেতানেত্রীদের পীড়াপীড়িতেই আশির দশকের গেড়ার দিকে অনেকটা হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠে আসেন।
একদিকে অবুঝ দুই শিশু সন্তান নিয়ে ঘর-সংসার; অন্যদিকে স্বামীর হত্যাকারী জেনারেল এরশাদকে উৎখাতে মাঠের রাজনীতি। এরপরও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বেগম জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বেই ’৯০-এর পটপরিবর্তন ঘটে। দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হওয়ার পরও জিয়ার ইমেজ আর তার আপোষহীন অসাধারণ নেতৃত্বের আকৃষ্ট হয়ে মানুষ বিএনপিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। এরপর আরো দুইবার ক্ষমতায় বসেন বেগম জিয়া।
‘আপোসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি খালেদা জিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনভাবে চিন্তার মাধ্যমে পরিস্থিতির মূল্যায়ন, দ্রুত সমন্বয় এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হন। এর অন্যতম উদারহরণ প্রধানমন্ত্রীর ফোনের বিষয়টি এবং নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হওয়া।’
‘এর শুরুটা হয় ২০০৮ এর নির্বাচনকে দিয়ে। ওই নির্বাচনের পরাজয়কে জনগণের রায় হিসেবে না মেনে তাকে তথাকথিত ‘১/১১ সরকারের’ মেকানিজম হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। এমনকি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সরকার চালানোর সময় তার ছেলে যে ভুল করেছেন তা তিনি পর্যালোচনা করেননি।
এর আগে ১৯৮১ থেকে ২০১৫ এই ৩৫ বছরে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে জিয়া পরিবারকে। চড়াই-উৎরাই পাড় করতে হয়েছে তাকে। এরশাদের শাসনামলে ’৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাকে চরম জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়। অতঃপর ২০০৭ সালের ১/১১ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের সময় তাকে কারাগারে যেতে হয়। দুই ছেলেকেও পাঠানো হয় কারাগারে। ছেলেদের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।
এরপরও খালেদা জিয়া এমন একজন রাজনীতিক। কখনো ক্ষমতায় থেকেছেন আবার কখনো বিরোধী দলে থেকেছেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো পদে নেই, নেই সংসদেও। না থাকলে কী হলো, দেশের জনপ্রিয় দলগুলোর অন্যতম বিএনপির চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী। দেশের মানুষের ‘ভোটের অধিকার’ আদায়ের দাবিতে তার নেতৃত্বে চলছে ৮ বছর ধরে আন্দোলন। মূলত জনগণকে ঘিরেই তার সব কিছু। কিন্তু এখন তার জীবনে চরম দুর্দিন চলছে।
সরকার বিরোধী আন্দালনের মধ্যেই ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো নির্বাসনে থাকাবস্থায় মারা যান। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় ২৭ জানুয়ারি লাশ দাফন করা হয়। আর বড় ছেলে তারেক রহমান সেই ২০০৮ সাল থেকেই স্বপরিবারে নির্বাসনে রয়েছেন।
২০০৯ সালের মে মাসে ৪০ বছরের স্বামীর স্মৃতি বিজরিত বাড়ি ছাড়া হয়ে উঠেছেন ভাড়া বাসায়। এখানেই শেষ নয়, খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে অর্ধশতাধিক মামলা। কোকোর মৃত্যুর পর তার নাবালিকা দুই কন্যাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।
১৯৮১ থেকে ২০১৭ এই ৩৭ বছরে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে জিয়া পরিবারকে। চড়াই-উৎরাই পাড় করতে হয়েছে তাকে। এখন চরম দুর্দিন চলছে। ফলে সামনের দিনগুলো আরো বেশী চ্যালেঞ্জের মুখে এই পরিবারটি।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই মামলায় (জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) খালেদা জিয়ার (জেলে যাওয়ার মতো)সাজা হতে পারে এমন ধারণা এখন সবার মুখে মুখে। সরকার দলীয় শীর্ষ নেতানেত্রী এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মুখেও উচ্চারিত হচ্ছে খালেদার জেলে যাওয়ার বিষয়টি। এ নিয়েও শুরু হয়েছে নানা অপ্রকাশ্য গুঞ্জন। এমন কী কয়েকদিনের মধ্যেই খালেদা জিয়া কারাগারে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক পাড়ায় বেশ আলোচিত হচ্ছে।
যদিও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বেগম জিয়ার কারাগারে যাওয়ার মতো কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আর বেগম জিয়া কারাগারে গেলে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
অপর দিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালতে প্রমাণ হলে খালেদাকে শাস্তি পেতেই হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করছেন বেগম জিয়াকে সাজা দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আওয়ামী লীগের। তবে আদালতে সাজা হলে তাদের আর কিছুই করার থাকবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেগম জিয়াকে সরকারের শাস্তি দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। তবে এটি আদালতের বিষয়। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। আবার কেউ কেউ ভারতের তামিলনাডুর শশীকলার উদাহারণ টেনে বলছেন শশীকলার জন্য যেমন তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রীর পথ থেমে থাকেনি, খালেদা জিয়ার জন্যেও প্রধানমন্ত্রীর পথ পড়ে থাকবে না।
তিনি আরো বলেছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
এ দিকে খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, এমন অঘটন ঘটলে দেশের রাজনীতির পরিস্থিতি আরো নাজুক হতে পারে। নতুন করে সহিংস হয়ে উঠতে পারে দেশের রাজনীতি।
সবমিলেই হিসাব নিকাশের সময় এসেছে। স্বামীর ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ছাড়া হয়ে, পুত্র হারানোর শোক এবং কঠিন দুর্দিনে ম্যাডাম জিয়ার চোখের পানিও যাদের আন্দোলনের মাঠে নামাতে পারেনি। দলের যারা অতীতে অনেক আখের গুছিয়েছেন আন্দোলনের সময় তাদের ভূমিকা কী ছিল? মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য নিত্যদিন যারা ছক আঁকেন এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ আকড়ে রয়েছেন বছরের পর বছর; তারা আন্দোলনের সময় কোথায় ছিলেন, তারা কী করেছেন। সেসব বিষয়ও বিবেচনা নেয়ার সময় এসেছে।
ফলে দল এবং দেশের স্বার্থেই ম্যাডামকে এখন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুতে হবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আগামী দিনে ম্যাডাম কোন পথে হাটেঁন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে সামনের পথ যে একেবারেই মসৃণ হবে সেটা বলার উপায় নেই।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D