ছাতকে খিরা চাষে কৃষকরা স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৫

ছাতকে খিরা চাষে কৃষকরা স্বাবলম্বী

সুনামগঞ্জের ছাতক উপ‌জেলার দ‌ক্ষিন খুরমা হলদিউরা গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘানুউড়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে আমন মৌসুমের পর পতিত পড়ে থাকে শতাধিক কেদার জমি। এ জমিগুলো ৩/৪ বছর ধরে আবাদের আওতায় এনেছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। খিরা চাষ লাভজনক হওয়ায় ফসল উৎপাদনে আকৃষ্ট হচ্ছেন অনেকেই। পতিত জমি কাজে লাগিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চাষীরা। এখানের জমিতে বিভিন্ন জাতের খিরা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, আলু, ধনিয়া, বেগুন, টমেটো চাষ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ বেশি।

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের হলদিউরা গ্রামের উত্তরে ঘানুউড়া নদীর দক্ষিণ পাড় সংলগ্ন শতাধিক কেদার জমিতে আমন মৌসুমের পর বছরের পর বছর ধরে পতিত পড়ে থাকে। এ জমিতে অগ্রহায়ণের ফসল উত্তোলনের পর গরু চারণ ছাড়া কোন ধরনের ফসল উৎপাদন হতো না। এলাকার কয়েকজন কৃষক এ জমিতে ৩/৪ বছর আগে প্রথমে খিরা চাষ শুরু করেন এবং উৎপাদন ভাল হয়। এর পর থেকে দিন দিন খিরার আবাদ বেড়েছে। পতিত জমিতে কম খরচে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করে মুনাফা ভাল পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা খিরা চাষে আকৃষ্ট হয়েছেন। খিরা চাষ করে অনেকেই আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। খিরা যেন এখানের কৃষকদের স্বপ্ন। খিরা চাষের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হয়েছে। এলাকার আবাদকৃত খিরা স্থানীয় চৌকা পয়েন্টে সকালে জমজমাট অস্থায়ী খিরার হাট বসে। হাটে সুনামগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ, দিরাই, বিশ্বনাথ, ছাতক, গোবিন্দগঞ্জ, লামাকাজী, পাগলা বাজার, জাউয়া বাজার, দোলারবাজার, মানিকগঞ্জ বাজারসহ ছাতকের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এ অস্থায়ী হাট থেকে খিরা ক্রয় করেন। এখানের উৎপাদিত খিরার সিংহ ভাগ সিলেটের টুকের বাজার আড়তে নিয়েও চাষিরা বিক্রি করে থাকেন। বাজার মূল্য ভাল এবং চাহিদা বেশি থাকায় অল্প খরচে কম সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় নদীর পাড়ের অনাবাদী পতিত জমিতে খিরা আবাদ হচ্ছে। দিন দিন খিরা চাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

হলদিউরা গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক নুর উদ্দিন জানান, তিনি এ বছর খিরা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ চাষ করেছেন। ফলন ভাল হয়েছে। খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। লক্ষাধিক টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, এখানের জমি তরমুজ চাষের উপযোগী। কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগীতা করলে তরমুজ চাষ করা সম্ভব। তরমুজ চাষের নিয়ম না জানায় চাষিরা চাষে আগ্রহী হচ্ছে না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে সম্পূর্ণ অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আনা যেত এবং স্বাবলম্বী হতো স্থানীয় কৃষকরা।

আনামুল হক বলেন, ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে একবার প্রার্থী হয়ে সামান্য ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। এর পরে তিনি এখানে খিরাসহ বিভিন্ন সবজি চাষাাবাদ করে লাভবান হয়েছিলেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনি ৬ কেদার জমিতে খিরা এবং ৩ কেদারে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। মিষ্টি কুমড়া বিক্রয় করছেন। খিরা বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। আশা করছেন ৪লক্ষাধিক টাকা উৎপাদিত ফসল বিক্রয় করতে পারবেন।

মনফর আলী জানান, মিষ্টি কুমড়া, আলু, মরিচ, খিরা চাষ করেছেন। খড়া ও বিভিন্ন রোগের কারণে মিষ্টি কুমড়ার ফলন তেমন ভাল হয়নি। খিরার ফলন ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ ফেলে সবজি চাষ আরো লাভের মুখ দেখতেন।

উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি অফিসার চন্দন দাস বলেন, এ বছর খিরা গাছগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। রোগ-বালাই থেকে ক্ষেত বাঁচাতে করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই খিরা বাজারজাত করছেন। ফলন কম হলেও দাম ভাল পাচ্ছেন।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট