২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দ্বিতীয় স্ত্রী মনোয়ারাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে স্বামী আজাদ বক্স থানায় নিজে আত্নসমর্পন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরকিয়ার জন্য নয়, স্ত্রীর গচ্ছিত টাকা আত্নসাৎ করার জন্যই ২য় স্ত্রীকে হত্যা করেছে চতুর অজাদ বক্স।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১২ জানুয়ারি রোববার সকাল ১০টায় উপজেলার পৌর এলাকার উত্তর আলেপুর গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে ও নিহতের পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মনোয়ারা বেগমের পূর্বে অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। পূর্বের স্বামীর সাথে বনিবনা না হলে স্বামী তাকে মোহরানার নগদ ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করে তালাক দেয়। তালাকের পর মনোয়ারা বাবার বাড়ী চলে আসে। এই সময় কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিগাঁও গ্রামের আজাদ বক্স এর সাথে পরিচয় হলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। আজাদ বক্স নিজ বাড়িতে স্ত্রী শিরিন আক্তারকে (৪২) নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের সংসারে সন্তানাদিও রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও কমলগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর আলেপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগমের সাথে ২০২৩ সনে প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে আজাদ মিয়া মনোয়ারা বেগমকে ইসলামী শরিয়া নীতি মেনে ২০২৩ সালের ২ আগষ্ট দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মনোয়ারা বেগম আলেপুরস্থ বাবার বাড়িতে অবস্থান করতো। বিয়ের সময় মনোয়ারার নিকট পূর্বের স্বামীর দেয়া মোহরানার নগদ প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা গচ্ছিত ছিল। চতুর আজাদ বক্স নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকে। এক পর্যায়ে সরল বিশ্বাসে মনোয়ারা সমুহ টাকা আজাদের হাতে তুলে দেন। টাকা নেয়ার পর যৌতুক হিসেবে আরো ১ লক্ষ টাকা নেওয়ার জন্য মনোয়ারা ও তার পরিবাবেরর উপর চাপ সৃষ্টি করে। টাকা দিতে অনিহা করলে মারপিট করতে থাকে। তাই মনোয়ারা তার কাছে থেকে নেয়া টাকা ফেরৎ চায়। আজাদ টাকা ফেরৎ দিতে নানা ধরনের টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে মনোয়ারা টাকা উদ্ধারের জন্য কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্তের নামে সময়ক্ষেপন করতে থাকে।
এদিকে চতুর আজাদ মনোয়ারাকে অভিযোগ তুলে আনার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ঘটনার দিন গত ১২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেছিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে (৩৫) শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে পাষন্ড স্বামী আজাদ বক্স (৪২)। পরে শাস্তি কম হওয়ার জন্য হত্যার পর চতুর ঘাতক স্বামী আজাদ নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পন করেছে।
এদিকে স্থানীয় প্রতিবেশী ইয়াকুব আলী জানান, মনোয়ারাকে একাধিক বার নির্যাতন করতো স্বামী আজাদ বক্স। আমরা এটা নিয়ে বিচারও করেছি। মনোয়ারার কাছে গচ্ছিত টাকা ছিল, আজাদ তা ছলে বলে কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও মনোয়ারা ২টা অটোরিক্সা টমটম কিনে দিয়েছে। সেটারও কোনো টাকা পয়সা মনোয়ারাকে দিত না। পাওনা টাকা চাইতে গেলেই নির্যাতনের শিকার হতো মেয়েটি। এর আগেও গলায় ওড়না পেছিয়ে হত্যা করার চেষ্ঠা করেছে আজাদ বক্স। শেষ মেষ গলায় ওড়না পেছিয়ে হত্যাই করলো আজাদ। আমি এর সুষ্ট বিচার দাবী করছি।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী সুমন মিয়া বলেন, আমার বোনটা খুব সহজ সরল ছিল। আমরা খুব ছোট ছিলাম। মা ও বোন মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সংসার চালাতেন। আমাদের মাথায় ছায়া ছিল বোন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার বোনকে অত্যাচার করতো তার স্বামী আজাদ। সেই বোনকে খুব কষ্ট দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার স্বামী। সে আমাদেরও বলেছিল হত্যা করবে। কাউকে ছাড় দেব না। এভাবেই হুমকি দিত আজাদ। বোনের বিচারের জন্য আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছি। আমার বোনের হত্যার সর্বোচ্চ বিচার দাবী করছি।’
নিহতের মা পেয়ারা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ঘটনার সময় আমি পাশের বাড়িতে গিয়েছিলাম তরকারি রান্না করার জন্য রসুন আনতে। পরে ঘরের সামনে এসে দেখি মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকে দেখি আমার মেয়ের লাশ পরে আছে খাটের মাঝে। ছোট ছেলের কাছে জানতে পারলাম মেয়ের স্বামী ঘরের ভিতরে ঢুকে গলায় ওড়না পেছিয়ে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
এ ব্যাপারে মনোয়ারার ছোট ভাই সুমন মিয়া গত ১২ জানুয়ারি আজাদ বক্সকে একমাত্র আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, আসামী আজাদ বক্স থানায় আসলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D