জৈন্তাপুরে বলাৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে গৃহ শিক্ষককে খুন, যুবক গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৪

জৈন্তাপুরে বলাৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে গৃহ শিক্ষককে খুন, যুবক গ্রেপ্তার

সিলেটের জৈন্তাপুরে গৃহশিক্ষক মুক্তারুল হক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং মামলার আসামি ইফতেখার রশিদ মাহি (২২) কে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সনের ৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের তেলীজুরী গ্রামের রহমত আলীর ছেলে গৃহ শিক্ষক মুক্তারুল হক (৩৬) এর মৃতদেহ নিজবাড়ির নিকটবর্তী রাস্তার পাশের জমিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

এই ঘটনায় নিহতের পিতা রহমত আলী বাদী হয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কিছুদিন তদন্তের পর তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই সিলেট জেলা।

নিহত মুক্তারুল হক জৈন্তাপুরের তেলীজুরী গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। আর অভিযুক্ত মাহি একই গ্রামের বজলুর রশিদ শামীমের ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর সোমবার (১৩ মে) পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে মূল আসামি মাহিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয় মাহি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) তাকে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেন এর আদালতে হাজির করা হলে সে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মতে হত্যাকান্ডের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে। আদালত মাহিকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পিবিআই জানায়, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের পর সোমবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি পোশাক কারখানা থেকে মূল আসামি ইফতেখার রশিদ মাহিকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে মাহি পিবিআইকে জানিয়েছে, মুক্তারুল তাকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রাইভেট পড়াতেন। সে যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো তখন থেকে মুক্তারুল তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলাৎকার শুরু করেন। পাশাপাশি অশ্লীল দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। বিভিন্ন সময় বাধা দিলে তাকে ব্লেড দিয়ে দুই উরুতে অসংখ্য জখম করেন। অশ্লীল দৃশ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এবং স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে তাকে দীর্ঘ বছর যাবৎ বলাৎকার করে আসছিলেন গৃহশিক্ষক মুক্তারুল।

জিজ্ঞাসাবাদে মাহি আরও জানান, শেষ পর্যায়ে যুবক বয়সে এসেও তাকে বলাৎকার করতে চাইলে সে বাধা দেয়। এ সময় মুক্তারুল মাহির নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোনকে ‘নষ্ট’ করার হুমকি দেন। সেটি সহ্য করতে না পেরে মুক্তারুলকে খুন করার পরিকল্পনা করে মাহি।

২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর অতীতের মতো মুক্তারুল মাহিকে তাদের বাড়ির পেছনে বলাৎকারের উদ্দেশ্যে ডাকলে মাহি সন্ধ্যার পর সেখানে যায় এবং সেখানে থাকা কাঠ দিয়ে মুক্তারুলের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। এরপর মরদেহ তার বাড়ির রাস্তার পাশে জমিতে টেনে নিয়ে ফেলে দেয়। এরপর মাহি বাড়িতে এসে পুকুরে গোসল করে নফল নামাজ পড়ে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের খেলাও দেখে।

পরদিন সে রামপ্রসাদ গ্রামে তার নানাবাড়িতে চলে যায়। এর কিছুদিন পর খালার বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। এরপর আর এলাকায় আসেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র উপপরিদর্শক ঝলক মোহন্ত বলেন, ঘটনার তদন্তভার পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়। পরে সোমবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে মূল আসামি ইফতেখার রশিদ মাহিকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার তাকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট