গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করবে : বিশিষ্টজনেরা

প্রকাশিত: ১২:১০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬

১ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সংবাদে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বছরের শুরু থেকে বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে যাবে সবকিছুর মূল্য। অতিষ্ঠ হবে জনজীবন। বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে পরিবহন ভাড়া সেই সাথে দাম বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের। ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বৃদ্ধি সাথে সাথে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর হবে। ব্যবসায়ীদের মতে, গ্যাসের দাম বাড়ালে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারকে ব্যাহত করবে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরিবহন ভাড়াও বাড়িয়ে দেবেন মালিকরা। ক্রয়ক্ষমতার ওপর চাপ বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। চাপে পড়বে অর্থনীতি। মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে সরকার আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বিইআরসি সূত্র জানায়, বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার টাকা হতে পারে। এ ছাড়া সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩৫ থেকে বেড়ে ৪৩-৪৫ টাকা, গৃহস্থালিতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম ৭ থেকে বেড়ে ৯-১০ টাকা এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত ক্যাপটিভ বিদ্যুতের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৮ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ টাকা হতে পারে। : শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় কারখানা চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ  প্রতি মাসে গ্যাসের বিল ঠিকই গুনতে হচ্ছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় বহু কারখানায় গ্যাসের বদলে বাতাস প্রবেশ করে। সেই বাতাসও গ্যাসের দামে কিনতে হচ্ছে বলে উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে গণশুনানির সময় ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক করেও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করে। তার পরও গ্যাসের দাম বাড়ছে। : গণশুনানিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা এবং বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি তপন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গত বছর গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। ফলে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ : তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কারখানায় গ্যাসের চাপ এত কম থাকে যে, উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে রাখা যায় না। কিন্তু মিটারে ঠিকই বিল ওঠে। নতুন করে দাম বাড়ানো হলে বস্ত্রসহ শিল্প খাত ব্যাপকভাবে তিগ্রস্ত হবে। : সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, ‘গত বছর সিএনজির দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু লাইনে ঠিকমতো গ্যাস থাকে না। ফলে তাদের ব্যবসা কমছে। আবার দাম বাড়লে লোকজন গাড়িতে গ্যাস নেয়াই বন্ধ করে দেবে। এখন তেলের দাম কম। গ্যাসের বদলে জ্বালানি তেলকেই প্রাধান্য দেবেন গাড়ির মালিকরা : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচ বাড়বে। দাম বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের। পরিবহন ভাড়াও বাড়িয়ে দেবেন মালিকরা। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। চাপে পড়বে অর্থনীতি।’ : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্যাস উৎপাদান ও সরবরাহের এ সংকটকালে সর্বোচ্চ প্রস্তাবিত ১৪০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি দেশের তৈরি পোশাক রফতানি, চামড়া শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ অন্যান্য গ্যাস নির্ভর শিল্প-কলকারখানার উৎপাদনকে ব্যাহত করবে বলে মনে করে ডিসিসিআই। এর প্রভাবে বাংলাদেশের রফতানি সমতা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ নিরুৎসাহিত হতে পারে। : গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়মতার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে। এছাড়াও শিল্পায়ন, ব্যাবসায় প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফিতির ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ডিসিসিআই গ্যাসের মূল্য এখনই বৃদ্ধি না করে বরং শিল্প কল-কারখানায় চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করার ওপর তাগিদ দিয়েছে। কারণ গ্যাসের অভাবে এখনও অনেক শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিসিসিআই সরকারকে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ নীতিমালার পাশাপাশি তিন বছর মেয়াদী গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করছে। : গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি করা হলে তৈরি পোশাক খাত এবং অন্যান্য আমদানি বিকল্প রফতানি নির্ভর শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ  বেড়ে যাওয়ায় তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার সম্ভাবনা কমে আসবে।