শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬

আজ বুধবার সেই বেদনাঘন ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে শীতার্ত এই দিনে। আমাদের জাতীয় জীবনের আরেক শোকাবহ দিন এটি।

বিজয়ের চূড়ান্ত ক্ষণে বাংলাদেশ তার বিশিষ্ট ও শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারায়। এ দিন রেডিও শুনতে শুনতে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তার স্ত্রী লিলি চৌধুরীকে ডেকে গভীর প্রত্যয়ে বলেছিলেন, ‘আর মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা বাকি আছে দেশ স্বাধীন হতে।’ কিন্তু ঘাতকরা তাকে স্বাধীনতার লাল সূর্য দেখতে দেয়নি।

শুধু মুনীর চৌধুরীকেই নয়, বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করে যেনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য শত্রুরা নিখুঁত পরিকল্পনায় বেছে বেছে হত্যা করে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চায় অগ্রবর্তী ব্যক্তিদের।

সেইসব ক্ষণজন্মা ব্যক্তিদের স্মৃতি স্মরণে রাজধানীর মিরপুরে নির্মিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধে শ্বেতপাথরে খোদিত রয়েছে তাদেরই অমরত্বের কথা- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,/ভয় নাই, ওরে ভয় নাই-/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান,/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’

কবিতার মতো করেই শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। তবে তাদের হারানোর বেদনায় স্বজনসহ দেশবাসী আজো কাতর। তাদের প্রতি বিনস্র শ্রদ্ধা ও ফুলেল ভালোবাসা জানাতে বুধবার ভোর থকেই সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাকান্ডের স্মৃতিবিজড়িত রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিস্তম্ভে।

এ উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ইতিহাস বলে, একাত্তর সালে টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন শত্রুদের হাত থেকে জাতি পরম মুক্তির প্রহর গুণছিল, ঠিক তখনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ঘাতকচক্রের হাতে প্রাণ হারান বাংলাদেশের মেধা ও মননের ধারক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদগণ।

গা শিউরে ওঠা সেই দিনে অকল্পনীয় নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব (জিসি দেব), অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আ ন ম মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক শিলালিপি পত্রিকার সম্পাদিকা বেগম সেলিনা পারভীন, ডা. আবুল খায়ের, ডা. রাশিদুল হাসান, ডা. ফজলে রাববী, ড. আবুল কালাম আজাদ, ডা. গোলাম মর্তুজা, ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেক, ড. ফয়জুল মুতী, আব্দুল মুক্তাদীর, সন্তোষ ভট্টাচার্য, আবুল বাশার চৌধুরী, সাহিত্যিক-সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীগণকে।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে অনেকের গলিত লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। বাকিরা রয়ে যায় নিখোঁজ, অজ্ঞাত।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী।