রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মিলে হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি

প্রকাশিত: ৮:২৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২২

রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মিলে হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

ঢাকায় হঠাৎই বেড়েছে খুন, ছিনতাই, ছুরিকাঘাতে হত্যা। ডিএমপির তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীতে খুন হন ৯ জন। ফেব্রুয়ারিতে খুনের ঘটনা ঘটে ১৬টি। এর মধ্যে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটে মিরপুর এলাকায়। মার্চ মাস শেষ হতে এখনো একদিন বাকি। এরই মধ্যে গত ২৯ দিনে আলোচিত একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। 

ফলে ঘরে-বাইরে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ অর্থাৎ সাধারণ-অসাধারণ সবাই এখন আতঙ্কে। এরই মধ্যে পবিত্র রমজান আসন্ন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ব্যবসায়ীরাও উদ্বেগে রয়েছেন।


অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে মানুষ আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ায় অনেকে এখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক নেতারাও এর মধ্যে রয়েছেন। টেন্ডারসহ বিভিন্ন আর্থিক দ্বন্দ্বে বাড়ছে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ।

এছাড়া আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশিং গড়ে না ওঠায় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না অপরাধ।

সম্প্রতি রাজধানীর শাহজাহানপুরে রাস্তার যানজটে শত শত মানুষের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এছাড়াও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা, গরিবের চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ডা. আহমেদ মাহি বুলবুল, নার্স, শিক্ষার্থী, গৃহবধূসহ নৃশংস খুনের শিকার হন ১৫ জন। একই সময়ে ছিনতাইকারীদের হাতে পুলিশের ছয় সদস্যেরও জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে। যদিও কয়েকটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারপরও আগের চেয়েও অধিক হিংস্র অপরাধের ঘটনা বাড়ছেই।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীতে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৩৬টি। জানুয়ারিতে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চুরির মামলা ৩১টি। চাঁদাবাজির ঘটনায় গত দুই মাসে ঢাকায় মামলা হয়েছে ১৬টি।

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত জানুয়ারি মাসে পাঁচটিও ফেব্রুয়ারিতে আরও পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে ডিএমপির এ মামলার তথ্যে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ, ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে মামলা করেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এ জন্য দায়ী পুলিশের ব্যবস্থাপনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এ বাহিনী এখন শুধু রাজনৈতিক কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে তাই না; ঘুষ, দুর্নীতি ও পেশাদারিত্বের ঘাটতিও বড় কারণ। ফলে মানুষ বিপদে পড়লেও সহায়তা নিতে গিয়ে নতুন করে বিপদে পড়েন কি-না সে ভয়ে থানামুখী হতে চান না।

গত ২৩ মার্চ বুধবার দিবাগত রাতে বংশাল থানার প্রবেশ গেটে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এসআই রবি, হাসানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এদের মধ্যে কনস্টেবল নজরুল ইসলামের অবস্থা গুরুতর। ওসি আবুল খায়ের জানান, গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে ইমনও জুয়েল নামে দুই ছিনতাইকারীকে পুলিশ হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে তাদের থানার গাড়িতে করে বংশাল থানার সামনে নিয়ে আসা হয়। থানার প্রবেশ গেটে গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের চেক করার সময় হঠাৎ ছিনতাইকারী ইমন সুইচগেয়ার বের করে পাঁচ পুলিশকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এতে এসআই হাসানসহ এএসআই তাজুল ইসলাম কনস্টেবল নজরুল, সজীব ও শফিকুল আহত হন।

তবে গত সোমবার পর্যন্ত ওই দুজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে গত ২২ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গুলিস্তান টিএন্ডটি অফিসের সামনের ফুটপাতে ছুরিকাঘাতে আহত হন এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি শাহবাগ থানায় কর্মরত। তিনি মামলার কাজে পুরান ঢাকায় জজকোর্টে যান। রাতে বাসে করে গুলিস্তানে নামেন। রাস্তা পার হয়ে টিএন্ডটি অফিসের সামনে দিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় টিএন্ডটি অফিসের সামনে আসলে পেছন থেকে কে বা কারা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায়ও জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ডিএমপি মিডিয়া বিভাগের ডিসি ওমর ফারুক বলেন, কে কাকে হত্যা করবে, সেটি মনোজগতের বিষয়। ডাক্তার নিহতের ঘটনাটি ছিনতাই নয়। এটি তার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেছে। কারণ, তিনি কিছুদিন আগে ১৫ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন। পুলিশ আহতের ঘটনাটিও আইনশৃঙ্খলার অবনতি নয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অপরাধের মাত্রা কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। আশা করা যাচ্ছে, সবকিছু শান্ত হয়ে যাবে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থানাগুলোতে টহল জোরদার করাও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে যেকোনো দেশের রাজধানী
শহর থাকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কিন্তু আমাদের দেশে খোদ রাজধানী ঢাকাতেই গত কয়েক দিনে ঘটেছে বেশ কয়েকটি লোমহর্ষক ঘটনা। ঢাকায় হঠাৎ করে বেড়েছে খুনোখুনি। বেপরোয়া হয়ে ওঠা সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। দেশের নানা প্রান্তেও ঘটছে নৃশংস অনেক ঘটনা। হত্যার শিকার হয়েছেন বিদেশী নাগরিকও। সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে অনেকের মনে।
তুচ্ছ ঘটনায়ই খুন করা হচ্ছে বীভৎসভাবে। গুম করতে খন্ডবিখন্ড করা হচ্ছে লাশ। আবার আগুনে পুড়িয়েও হত্যার চেষ্টা হচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে ঘটছে এসব খুন। একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। যদিও চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনার ক্লু বের করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পরও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমছে না।

অনেকে বলছেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য রাজনীতিবিদরা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা বাড়িয়েছে। সেই সুযোগে সন্ত্রাসীরাও ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট