শতাব্দীর মহানায়ক তোমাকে অনেক মনে পড়ে

প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১

শতাব্দীর মহানায়ক তোমাকে অনেক মনে পড়ে

Manual7 Ad Code


আবদুল কাদের তাপাদার


সিলেটবাসীর হারিয়ে যাওয়া রত্ন, শতাব্দীর মহানায়ক তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সিলেটবাসীর আরেক রত্মগর্ভা মহান বীরপুরু ষজেনারেল এম,এ,জি ওসমানীর পরই যাঁকে মানুষ বেশিদিন মনে রাখবে তিনি আমাদের এম সাইফুর রহমান।

১৯৭৩ ও ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের গঠিত জাতীয় বেতন কমিশনে কাজ করে তিনি বঙ্গবন্ধুর লিখিত প্রশংসাপত্র পেয়েছিলেন।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কিংবা বিশ্বব্যাংকের সাবেক অনেক প্রেসিডেন্ট যাঁকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতেন।

পেশাগত জীবনে নামকরা চার্টার্ড একাউন্ট কিংবা তেল গ্যাস উত্তোলন কোম্পানির পরামর্শক হিসেবে কাজ করা সিলেটের এই মেধাবী মহানায়কের রাজনীতিতে মোটেই আগ্রহ ছিল না।
সিলেটের উন্নয়নের এক বিস্ময়কর শর্ত দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে শরীক হন তিনি।
১৯৭৯ সালের নির্বাচনে নিজ এলাকা মৌলভিবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলে দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন।এর আগে তিনি জিয়াউর রহমানের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়তে কাজ করতে গিয়ে বিশ্ববাসীর সুনজরে আসেন এম সাইফুর রহমান।

এক সময় সৌদি আরবের প্রভাবশালী তেলমন্ত্রী জাকি ইয়েমেনি আর বাংলাদেশের কিংবদন্তি অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের নাম ছিল বিশ্ব নেতাদের মুখে মুখে। রাস্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়েও তিনি সিলেটকে ভালোবাসতেন মায়ের মতো। সিলেটই ছিলো তাঁর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।

সিলেটের উন্নয়নের ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে তার চোখ রাঙানিতে অনেক সময়ে খামোশ হয়ে পড়তেন জিয়ার মতো রাস্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী পরিষদের প্রভাবশালী কেউ কেউ।

Manual1 Ad Code

আমি এখানে মাত্র দুটি ঘটনার উল্লেখ করছি।

এক।।
১৯৯৫ সালে সিলেটের সিলেট নগরীর মানিকপীর টিলা এলাকায় লায়ন শিশু হাসপাতালের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব এলজিআরডি মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, শামসুল হক, তরিকুল ইসলামসহ ৫/৬ জন প্রভাবশালী মন্ত্রী।

বক্তব্যে প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর সামনেই অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে নানাভাবে আক্রমণ করছিলেন। তিনি সিলেটের উন্নয়নে সব টাকা বিলিয়ে দিচ্ছেন। এরকম নানা তীর্যক মন্তব্য ও কথার বাণ ছুঁড়ছিলেন সাইফুর রহমানের প্রতি।
শেষে যখন সাইফুর রহমান বক্তৃতা শুরু করলেন তিনিও
কথার বাণে ক্ষত – বিক্ষত করে তুললেন বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের।
সাইফুর রহমান বললেন, সিলেটের কারণেই বাংলাদেশ বেঁচে আছে।আপনারা বেঁচে আছেন। সিলেটে আমি যেভাবে দিচ্ছি সেভাবে আরও ৫০ বছর দিয়ে গেলেও
আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায় হবে না।
অডিয়েন্স থেকে হাততালি পড়লো। চুনকালি পড়লো মন্ত্রীদের মুখে। চুপসে গেলেন তারা।

Manual3 Ad Code

দুই।।

সিলেট বিভাগ ঘোষণার দিন।

Manual1 Ad Code

ডেটলাইন ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪।
সিলেট সার্কিট হাউস।অপরাপর মন্ত্রীদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে সিদ্ধান্ত আটকে আছে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও বিভাগ ঘোষণার পক্ষে নয়। এদিকে তালপাকা রোদের দিনে দুপুর গড়িয়ে সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে লক্ষাধিক জনতার উত্তেজনা আকাশে বাতাসে যেনো ঝড় তুলেছে। কী ঘোষণা আসছে?

মন্ত্রী পরিষদের অবস্থা আঁচ করতে পেরে সাইফুর রহমান কথা বলতে বলতে খালেদা জিয়ার দিকে চোখ লাল করে তাকালেন। আর জোরে স্বরে জানান দিলেন, বিভাগ ঘোষণা না করলে আপনি মাঠে যাওয়ার দরকার নেই।আমিও এই মুহূর্তে পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম। পাল্টে গেলো দৃশ্যপট।
প্রধানমন্ত্রী বলে উঠলেন, আপনি যা চাইবেন তাই হবে। বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের মুখে চুনকালি পড়লো। বিবর্ণ হয়ে গেলো তাদের চেহারা।

আর সাইফুর রহমানের চেহারায় যেনো বিজয়ের হাসি ছড়িয়ে পড়লো। খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাঠে আসলেন সাইফুর রহমান।

লক্ষ জনতার সমাবেশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘোষণা করলেন, আজ থেকে সিলেট বিভাগ হলো,বিভাগ হলো।

মঞ্চে সেদিন সিলেটবাসীর নয়নমনি ক্ষণজন্মা বীরপুরুষ, শতাব্দীর মহানায়ক সাইফুর রহমানের বিজয়ের হাসিতে
যেনো আন্দোলিত হয়ে উঠেছিলো লক্ষ মানুষের বিজয়গাথা।

Manual1 Ad Code

আমাদের সিলেটবাসীর নয়নমনি সাইফুর রহমান চিরদিনের মতো বিদায় হয়ে গেলেন ২০০৯ সালের আজকের এই দিনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়।

আর কোনোদিন তিনি সিলেটের উন্নয়নের জন্য ঝগড়া করবেন না মন্ত্রীসভায়। প্রধানমন্ত্রীকে ঝাড়ি মারার দুঃসাহস দেখাবেন না কোনোদিন।

আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা যেনো বানিয়ে নেয় এই দোয়া করছি।


লেখকঃ সম্পাদক- এখন সিলেট ডটকম


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code