বিশ্বনাথে মামলার বাদীর বাড়িতে হামলা, আহত ১০

প্রকাশিত: ১:১৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৬

বিশ্বনাথে দিনমজুর আব্দুল মনাফ হত্যাকান্ডের জের ধরে একটি পরিবারের বসত বাড়িতে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আহমদ রেজা ইদ্রিস আলীর বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নারী ও শিশুসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। বসত বাড়িতে হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় আরো ১জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহতরা হলেন- আহমদ রেজা ইদ্রিস আলীর পুত্র সজিব রেজা (২৮), জুবায়ের রেজা (২৫), জামিল রেজা (২২) কামাল রেজা (১১), মেয়ে ফারহানা বেগম (১৮), সোহেনা বেগম (১৭), রুবেনা বেগম (১৫), পুত্রবধূ ফাতেহা বেগম (২৪), একই গ্রামের আনোয়ার মিয়া (১৭) ও নানু মিয়া (৩০)। গুরুতর আহতদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রামের মোড়ল-মাতব্বরদের প্ররোচনায় পঞ্চায়েত কর্তৃক একঘরে করে রাখা পরিবারটির উপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, হরিপুর গ্রামের আব্দুল মনাফ (৫৫) ২০১৫ সালে ১৬ মে বিকেল থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ১৮ মে সন্ধ্যায় নিজ বসত ঘরের সম্মুখের গোয়াল ঘর থেকে আব্দুল মনাফের লাশ উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় নিহত মনাফের ভাই আব্দুল হাসিম বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে ঘটনাটি ভিন্নখানে প্রবাহিত করতে গ্রামের কথিপয় মোড়ল-মাতব্বর একের পর এক কুটকৌশল চালিয়ে গ্রামের নিরীহ লোকদের ভয় ভীতি দেখিয়ে মামলা বানিজ্য করে। চলে পক্ষে-বিপক্ষে নানান গল্পকাহিনী ও নাটকীয়তা। বৃহত্তর সিলেটের চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে নিহত মনাফের লাশ উত্তোলন ও কবর থেকে লাশ উধাও অতপর সুরমা নদী থেকে কংকাল উদ্ধার, ডিএনএ টেস্ট, ডিবি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, সর্বশেষ সিআইডি’র তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার বাদি নারাজি দিলে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য ভিন্ন একটি সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর থেকে গ্রামের প্রভাবশালীরা মামলাটি নিয়ে নিজেদের মতো প্রভাববিস্তারের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ ঘটনার জের ধরেই শুক্রবার সকালে গ্রামের আহমদ রেজা ইদ্রিস আলীর বসত বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আহমদ রেজা ইদ্রিস আলী অভিযোগ করেন, মনাফ হত্যা মামলার মূল আসামীদের বাচাঁতে গিয়ে কুচক্রীমহল আমার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং আমাকে এই মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সিআইডি’কে আমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার কারণেই কুচক্রীমহল আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমার উপর হামলা হয়। এঘটনায় ৩ অক্টোবর আমি ১১জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে দ্রত বিচার আইনে মামলা দায়ের করি (মামলা নং- সিআর ১৪/২০১৬)। শুক্রবার সকাল ১০টায় আমার ছেলে সজিব রেজা সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের পূর্বের রাস্তায় যাওয়া মাত্র অভিযুক্ত দলা, নানু, মুতলিব ও কবিরুল গংরা তার উপর হামলা করে ধাওয়া করলে সে (সজিব) গুরুতর আহত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী মাধবপুর গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে আমি ও আমার অপর ছেলেরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তারা (অভিযুক্তরা) অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার বসত ঘরে হামলা চালায় এবং আমার অপর ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে, পুত্রবধূকে মারপিট করে আহত করে। আমার বাড়িতে হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত নানু ডুবায় পড়ে গেলে তার সংঙ্গীয় লোকেরা আমি মনে করে তাকে মারপিঠ করে।
অভিযুক্ত দিলওয়ার হোসেন দলা বলেন, আমাদের উপর আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। আজ (শুক্রবার) সকালে আমাদের গ্রামের নানু মিয়া দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে আহমদ রেজা ইদ্রিস আলী গংরা তার (নানু) উপর হামলা করে। এতে সে গুরুত্বর আহত হয়।
বিশ্বনাথ থানার ওসি মনিরুল ইসরাম পিপিএম বলেন, এঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে। কে বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন জানতে চাইলে তিনি এসআই ছাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এব্যাপারে এসআই ছাইফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট