২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২০
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সারা দেশে কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে দেশের প্রান্তিক মানুষ। এসব প্রান্তিক মানুষের সহায়তার উদ্দেশ্যে নতুন উদ্যোগ দিচ্ছে সরকার।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুই কোটি মানুষকে (৫০ লাখ পরিবার; পরিবার প্রতি চারজন ধরে) সরাসরি নগদ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতি পরিবার নগদ দুই হাজার ৪০০ টাকা করে পাবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দু-এক দিনের মধ্যে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড় করবে। আর পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তদারকি করছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রান্তিক মানুষদের সহায়তা করার ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে দেশের গরিব, দুস্থদের চিহ্নিত করতে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। আর শহর এলাকার জন্য প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করছে।
সব মিলিয়ে ৫০ লাখ পরিবারের একটি তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ধরা হয়েছে চারজন করে। সেই হিসাবে নগদ প্রণোদনার আওতায় আসছে দুই কোটি প্রান্তিক মানুষ। প্রতি পরিবার মাসে পাবে দুই হাজার ৪০০ টাকার নগদ সহায়তা। প্রতিজনে গড়ে ৬০০ টাকা। প্রণোদনার অর্থ সরাসরি চলে যাবে তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে অথবা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
প্রথম কিস্তির টাকা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হতে পারে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অবস্থা বিবেচনায় আরেক দফা নগদ প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উচ্চ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো সময় এ অর্থ ছাড় করতে প্রস্তুত রয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রথম কিস্তির জন্য ১২০ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের।
সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার অর্থ আসবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। তবে দুই কোটি প্রান্তিক মানুষের জন্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকার যে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে তা আসবে বাজেট খাত থেকে। এ জন্য সরকার ব্যাংক বা বিদেশ থেকে সহায়তাস্বরূপ অর্থ নেবে না। অপ্রত্যাশিত খাত থেকে এ অর্থ ব্যয় হবে।
নগদ সহায়তার অর্থ ছাড় হলে সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ প্রণোদনার আওতায় আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী খুব শিগগিরই এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড় করা হবে। বিষয়টি সরাসরি তদারক করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়সহ অন্যান্য কাজ করবে।
তিনি জানান, শহর-গ্রাম দুই জায়গায়ই এ প্রণোদনা দেওয়া হবে। তাই আশা করা যায়, প্রান্তিক মানুষরা না খেয়ে থাকবে না। আরো অর্থ ছাড়ের প্রয়োজন হলে অর্থ বিভাগ তা করবে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ত্রাণ যা দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত না। পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা আরো দেওয়া উচিত। তবে যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটাকে সাধুবাদ জানাই।
তিনি বলেন, গরিব বা প্রান্তিক মানুষ কিভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এখানে অনেক ফাঁক থাকতে পারে। তালিকায় ফাঁক-ফোকর থাকলে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ দিলে প্রকৃত প্রান্তিকরা বঞ্চিত হবে। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। সব মিলিয়ে বিষয়টি ভালো।
একই ব্যাপারে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পিআরআই’র হিসাবে দেড় কোটি পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ৫০ লাখ। সংখ্যাটা বাড়ালে ভালো হয়। টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে তিন হাজার করা হলে একজন লোক দুমুঠো ভাত খেতে পারবে। এতে সরকারের খরচ বাড়বে না।
তবে তার মতে এ সুবিধা বেশিদিন চালানো ঠিক হবে না। এতে প্রান্তিক মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, ‘আমার মতে এটি প্রথম তিন মাস, এরপর ছয় মাস দেওয়া যেতে পারে। দেড় কোটি পরিবারকে তিন মাস তিন হাজার টাকা করে দিলে সরকারের খরচ হবে ১১-১২ হাজার কোটি টাকা। এটি খুব বেশি নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তালিকা যেন রাজনৈতিক না হয়। মেম্বার, চেয়ারম্যানরা এই তালিকা করলে রাজনীতিকীকরণের আশঙ্কা থাকে। এতে অনেকেই বাদ পড়বেন। এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাদ দেওয়া যেতে পারে। কারণ তারা ইতিমধ্যে বেতনের টাকা পেয়েছেন। তাদের এ অর্থ দরকার আছে বলে মনে হয় না। এর পরিবর্তে অন্যদের দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, কৃষকের ব্যাংক হিসাব রয়েছে এক কোটি এক লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫টি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৫৬ লাখ ৭০৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ২৬ লাখ ৬২ হাজার ১৬২, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুই লাখ ৪৭ হাজার ৪৯৭ এবং অন্যান্য সুবিধাভোগীর জন্য ১৮ লাখ ২৩ হাজার ১৬২টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট দুই কোটি পাঁচ লাখ ২০ হাজার ১৩৪টি ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল দুই হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। সরকার এসব ব্যাংক হিসাবে সাহায্য নিতে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তাদের বিকাশ, রকেট এবং নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। এ জন্য প্রান্তিক মানুষদের মোবাইল নম্বরও নেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার যদি নতুন করে আরো প্রণোদনা ঘোষণা করে সে জন্য যাতে অর্থ সংস্থানে সমস্যা না হয় সে ব্যবস্থাও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খরচ না হওয়া অর্থ প্রণোদনার কাজে লাগানো হবে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যেতে পারে। এ টাকা প্রণোদনা খাতে যোগ হবে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে ৪৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে থাকার কারণে এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না। এ ছাড়া বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ কমেছে। এসব টাকাও প্রণোদনার খাতে ব্যয় হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে মানবিক সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে সরকার। ৬৪ জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, সারা দেশে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টন। বিতরণকৃত চালে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৫। উপকারভোগী লোকসংখ্যা তিন কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার ৭২।এই সময়ে সরকার ৫৯ কোটি ৬৫ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। যার মধ্যে নগদ সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা দুই কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার। এর সঙ্গে নতুন করে আরো দুই কোটি মানুষ যুক্ত হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে পাঁচ কোটি।
সরকার ওএমএসের মাধ্যমে খোলাবাজারে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি, কোনো ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে ত্রাণ সরবরাহ করেছে। এসব ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। নগদ অর্থের ক্ষেত্রে যেন এ অবস্থা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এবার কোনো মধ্যস্থতাকারী রাখছে না সরকার। নগদ সহায়তার অর্থ প্রান্তিক মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দিয়ে দেওয়া হবে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D