সিলেটের উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করলেন ড. এ.কে আব্দুল মোমেন

প্রকাশিত: ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৬

সফল মিশন দিয়েই সিলেটের উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করলেন জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত, বরেণ্য কুটনীতিক ও অর্থনীতিবিদ ড. এ.কে আব্দুল মোমেন।

দেশমাতৃকার সুনাম ও সম্মান বৃদ্ধিকে বুকে ধারণ করে দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত সময়ই কাটিয়েছেন পূণ্যভ‚মি সিলেটের কৃতি সন্তান ড. এ.কে আব্দুল মোমেন। কর্মক্ষেত্রে একজন দক্ষ ও সফল ব্যক্তি হিসেবে দেশ বিদেশে খ্যাতি অর্জনে তিনি সক্ষম হয়েছেন।

সর্বশেষ ২০০৯ থেকে ২০১৫ সন পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে ড. মোমেন এর অবদান ছিল অনন্য। কর্মক্ষেত্রে সর্বদাই একজন সফল, অত্যন্ত দুরদর্শী, ত্যাগী ও বিচক্ষণতার অধিকারী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন। সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে ২০১৫ সালে ২৩ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘের দায়িত্ব ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য দেশে ফিরে আসেন।

দেশের এবং নিজ এলাকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন ড. মোমেন। এমতাবস্থায় দেশে নেমেই তিনি সর্বত্র সক্রিয় হয়ে উঠেন। গত ২৭ নভেম্বর তিনি প্রথম সিলেট আসলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সিলেটবাসী তাকে বিপুল অভ্যর্থনার মধ্যদিয়ে বরণ করেন।

এরপর থেকে ড. মোমেন সিলেট এবং ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তৎপর হয়ে ওঠেন। শুরু করেন নিজ জন্মস্থান সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের অগ্রগতি নিয়ে ভাবনা।

ড. মোমেন এর বড় ভাই সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর নেতৃত্বে সিলেটে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডকে গতিশীল করার জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। বিশেষ করে সিলেটে অর্থমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কাজ দ্রুতসময়ে শেষ করার জন্য নজরদারি বাড়ান তিনি।

এছাড়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সিলেটের স্বাস্থখাতের উন্নয়ন, সিলেট নগরী ও নগরীর বাইরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে ঢাকায় অর্থমন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠকের উদ্যোগ নেন ড. এ.কে আব্দুল মোমেন। যার ফলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর নেতৃত্বে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে গতি বৃদ্ধি পায়।

চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাইরে ড. এ.কে আব্দুল মোমেন সিলেটবাসীর জরুরি প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তার মিশন শুরু করেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকা-সিলেট ৪ লেন সড়ক বাস্তবায়ন, যে দাবিটি প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সরকারের আমল থেকে সিলেটবাসী জানিয়ে আসছেন। সাবেক সরকারগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকার প্রধানগণ বার বার আশ্বস্থ করার পরও এই দাবিটি আলোর মুখ দেখেনি কখনো।

সিলেট বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে সকল পরিচিতি থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট অঞ্চল উন্নয়নে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় এ অঞ্চলের সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানে যাচ্ছে না।

এছাড়া ঢাকা-সিলেট একমাত্র হাইওয়েটির কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় এই রাস্তা একদিকে যাতায়াতকারীদের ঢাকা-সিলেট কিংবা সিলেট-ঢাকা যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লেগে যায়। অন্যদিকে, মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদেরকে চলাফেরা করতে হয় এ সড়ক দিয়ে। প্রায়ই ঢাকা-সিলেট সড়কে দুর্ঘটনা লেগেই আছে। এ কারণে এ সড়কে দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে শত শত লোক অকালে প্রাণ হারিয়েছে।

অবশেষে ঢাকা-সিলেট ৪ লেনের রাস্তা বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে হাট-ঘাট বেঁধে নামেন ড. এ.কে আব্দুল মোমেন। এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার তোপে পড়েন তিনি। রাস্তাটির বাস্তবায়নের অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক এবং বিনিয়োগ জটিলতায় পড়েন তিনি। এ রাস্তা বাস্তবায়নের বিরাট অংকের এ টাকার যোগান বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগে এই মুহুর্তে কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে কমপক্ষে আরো ৮-১০ বছর বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিদেশি বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনা এবং বহুমুখি জটিলতার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদিচ্ছা ও আন্তরিক সহযোগিতায় চীন সরকারের আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট ৪ লেন রাস্তা বাস্তবায়নের প্রকল্পটি সরকার অনুমোদন করে। যার নেপথ্যের মুল কারিগর ছিলেন ড. এ.কে আব্দুল মোমেন।

উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ৯ অক্টোবর ঢাকায় চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি.’র সঙ্গে বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আর অর্থ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে চীন সরকারের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরকালে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশ-চীন সরকারের মধ্যে এ চুক্তি সাক্ষরিত হয়।

ঢাকা-সিলেট ৪ লেন রাস্তা বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই বিনিয়োগ করবে চীন সরকার।

ড. এ.কে আব্দুল মোমেন বর্তমানে জনপ্রতিনিধি বা সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে তার যে ভিশন, এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল ঢাকা-সিলেট ৪ লেন রাস্তা বাস্তবায়ন। অবশেষে রাজনীতির ময়দানে নেমেই সফলতার মধ্যদিয়ে শুরু করলেন সিলেটের উন্নয়নে তাঁর অভিযাত্রা। ড. মোমেনের কর্মতৎপরতায় দলমত নির্বিশেষে সিলেট বিভাগের জনগণ অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। তাকে নিয়ে সিলেটের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

ড. মোমেন এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, আমি সকল সময়ই সিলেটের উন্নয়নে স্বপ্ন দেখি। আর সেই স্বপ্নের মধ্যে ঢাকা-সিলেট ৪ লেনটি ছিল অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের জন্য অত্যন্ত আন্তরিক বলে আমরা সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি।

এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুিতসময়ের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে সে কাজের পেছনে লেগে থাকতেই হয়। তা না করলে কিছুই হয় না। এই প্রকল্প তারই একটি উদাহরণ। ড. মোমেন বলেন, সিলেট আমার জন্মস্থান। প্রবাসে অনেক দিন কাটিয়েছি। এখন সিলেটের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে মানুষের ভালবাসা আমাকে কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট