কবুতর পালনের আধুনিক পদ্ধতি

প্রকাশিত: ১১:৫৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯

কবুতর পালনের আধুনিক পদ্ধতি

Manual5 Ad Code

পোষা পাখিদের মধ্যে কবুতর অন্যতম। সুপ্রাচীনকাল থেকেই কবুতর পালনে মানুষের আগ্রহ চলে আসছে। কবুতর শখের জন্যই সাধারণত পালন করা হলেও ইদানিং অনেক লোক কবুতর পালনকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করেছেন।

Manual6 Ad Code

কবুতর পালনের গুরুত্ব: কবুতর অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত প্রাণী এবং সহজে পোষ মানে। আমাদের দেশের জলবায়ু ও বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত কবুতর পালনের জন্য উপযোগী। কবুতর পালনের গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে তুলে ধরা হলো-

১। এক জোড়া কবুতর ১২ মাসে ১৩ জোড়া পর্যন্ত বাচ্চা দেয়।

২। কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও বলকারক বলে সদ্য রোগমুক্ত ও প্রসব পরবর্তী ব্যক্তির জন্য উপকারী।
৩। কোন মহৎ কাজের শুরুতে ‘শান্তির প্রতিক’ কবুতর ছেড়ে দেয়া হয়।

৪। প্রজনন, শরীরবৃত্তিয় ও অন্যান্য অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা কর্মে কবুতর ব্যবহার করা হয়।

৫। স্বল্পখরচ উৎকৃষ্ট মানের মাংস ও আয়ের উৎসরূপে কবুতর পালন লাভজনক উদ্যোগ।

কবুতর পালন কার্যক্রম ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বেকার যুবক এবং দুস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থানের উপায় হয়ে উঠেছে। কবুতরের রোগবালাই কম ক্স এরা পোকা মাকড় ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ক্স কবুতর পালন আনন্দদায়ক।

কবুতরের জাত: বাংলাদেশে কবুতরের প্রায় ২০টি বিভিন্ন জাত রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে- গিরিবাজ, রোলার লোটন, জালালি, গোলা ও সিরাজি। বিদেশি জাতগুলো হলো- কিং, ফ্যানটেল (ময়ূরপঙ্খি), জাকোবিন, মুকী, টিপলার, ফ্রিলব্যাক ও গ্যালাতী রোলার।

Manual7 Ad Code

উল্লেখ্য যে, কবুতর পালনে প্রাপ্যতা অনুযায়ী যেকোন জাত ব্যবহার করা যায়। সপ্তাহকাল একত্রে রাখলে এদের মধ্যে ভাব ও মিলন হয় এবং একত্রে জোড় বাঁধে। একটি স্ত্রী কবুতর প্রতিবার দু‘টি করে ডিম দেয়। কবুতরের ডিম ফুটে ছানা বের হতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। কবুতর সাধারণত ১৬-২০ বছর বেঁচে থাকে।

কবুতরের বাসস্থান: মুক্ত জীবন-যাপনকারী আপোষা কবুতর পুরনো দালানকোঠা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, দরগাহ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাঁক ফোকরে বা সিলিং- এ বাসা করে। পোষা কবুতরের জন্য ঘরের বারান্দায় বা কার্নিশে টিন বা কাঠের বাক্স অথবা মাটির হাঁড়ি বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা যায়। ৮-১০ জোড়া কবুতর পালনের জন্য বারান্দার কোনায়, বহু স্তরবিশিষ্ট মাটির খোপ তৈরি করা যায়।

কবুতরের বাসস্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়:

১। উঁচু, সমতল ও শুস্ক জায়গা।

২। খোঁপ ঘরের উঁচু স্থানে স্থাপন করতে হবে। যাতে শিয়াল, কুকুর, বেজি, ইঁদুর, ইত্যাদির হাত থেকে কবুতরকে নিরাপদ রাখা যায়।

৩। ঘর/খোঁপ সহজে পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করার সুবিধা সম্পন্ন স্থানে স্থাপন করতে হবে।

Manual7 Ad Code

৪। ঘরে যাতে পর্যান্ত সূর্যালোক পবেশ ও বায়ু চলাচল করার সুযোগ পায়। একজোড়া কবুতরের জন্য খোঁপের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হবে যথাক্রমে ৪৫, ৩০ ও ৩০ সে.মি. (১৮, ১২, ও ১২ ইঞ্চি)।

কবুতরের খাদ্য: কবুতরের সুষম খাবারে শর্করা, চর্বি, আমিষ, খনিজ ও বিভিন্ন ভিটামিন উপাদান থাকা প্রয়োজন। এরূপ মিশ্রিত সুষম খাদ্যে ১৫-১৬ % ক্রুড প্রোটিন থাকবে। প্রতি কেজি খাদ্যে বিপাকীয় শক্তি ২৫০০-২৬০০ ক্যালোরি থাকা বাঞ্চনীয়। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। সাধারণত একটি কবুতর দৈনিক তার দেহের ওজনের দশ ভাগের একভাগ পরিমাণ খাবার খায়। এ হিসাবে বিভিন্ন বয়সে কতবুতর দৈনিক ২০-৯০ গ্রাম খাবার খায়।

কবুতর সাধারণত ধান, গম, মশারি, খেসারি, মটর, ভূট্টা, সরিষা, বিভিন্ন কলাই ইত্যাদি দানা শস্য খেয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে কবুতর ছাড়ার আগে প্রতিদিন গম, কলাই ও সরিষার মিশ্রণের খাবার তৈরি করে দৈনিক ২০ গ্রাম হারে খাওয়ালে উৎপাদন ভালো হয়।
কবুতর ছানার দ্রুতবৃদ্ধি, হাড় শক্ত ও পুষ্টি প্রাপ্তির জন্য এবং পূর্ণবয়স্ক কবুতরের ও ডিমের খোসাশক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের খোসা, চূন, চুনাপাথর, শক্ত কাঠ কয়লা চূর্ণ, হাড়ের গুঁড়া, লবণ এসব একত্রে মিশিয়ে গ্রিট মিকচার তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিদিন কিছু কাঁচা শাকসবজি কবুতরকে খেতে দিতে হবে।

কবুতরের রোগ ব্যবস্থাপনা: আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ রোগই খাবার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত। স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়গুলো হচ্ছে-

১। সঠিকভাবে সেড তৈরি করতে হবে ক্স কবুতর উঠানোর পূর্বে সব যন্ত্রপাতি জীবানুমুক্ত করতে হবে।

Manual3 Ad Code

২। রোগমুক্ত খামার থেকে সুস্থ সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে ক্স জীবানুমুক্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

৩। খামারে অযাচিত মানুষের যাতায়ত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, শেড ও খোঁপ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৪। অসুস্থ কবুতর তড়িৎ আলাদা করে ফেলতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code