কে এই আরিফ? দশ বছর যা হয়নি আড়াই বছরে হয়েছে

প্রকাশিত: ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০১৮

এম এ রউফ ।। চোখ বন্ধকরে সিলেট নগরীর অলিগলির দিকে  মননিবেশ করলাম চলতে থাকলাম… !….হঠাৎ থেমে গেলাম,নিজে নিজেকে প্রশ্ন করলাম কে এই আরিফ?

উত্তরটা খুজতে গিয়ে, দেখলাম দশ বছর যা হয়নি আড়াই বছরে তা  হয়েছে।

গাড়িতে করে নয়াসড়ক পয়েন্ট থেকে মিরবক্সটুলা, চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার পয়েন্ট হয়ে  মদিনা মার্কেট গেলাম।  ক’দিন আগেও দেড় ঘন্টাও এ পথ অতিক্রম করা অসম্ভব ছিলো।  এখন তা ৩০ মিনিটের পথ।

২০০০ সাল পর্যন্ত সিলেট নগরীর ছড়াগুলো প্রায়  অবিকল ছিলো। তরতর করে পানি বয়ে যেতো। এই শহরে যারা বড় হয়েছেন তাঁদের শৈশবে এই ছড়াগুলো ছিলো নিত্যদিনের  অবিচ্ছেদ অংশ। মাছ ধরা থেকে শুরু করে , বাসনপত্র ধোয়ামোছা এমনকি অনেকে দৈনন্দিন স্নানও সেরে নিতেন ছড়ার জলে।
মূলত ২০০০ সালের পর থেকে নগরায়নের চাপে ছড়াগুলো দখল আর দূষণের কবলে পরে হারিয়ে যেতে থাকে।  কোথাও কোথাও ৩০ ফুট চওড়া ছড়া ৫ ফুটে এসে ঠেকে। চোখের সামনেই এগুলো দখল হতে থাকে।  সে সময় দ্বায়িত্বশীলরা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ২০১৪ সালে ছড়াগুলো ড্রেনের আকার ধারণ করে। এক এগারো আর ২০১৪ সালের পর থেকে মূলত শুরু হয় ছড়া উদ্ধার ও দখলমুক্ত কার্যক্রম। এর মধ্যে আলোচিত হয় সন্ধ্যাবাজারের নিচে দখল হয়ে যাওয়া ছড়া উদ্ধার কার্যক্রম। এটি দখলের যাতাকলে পরে  সরু নালায় রুপান্তর হয়। আর দখলবাজরা দিব্যি তার উপরে গড়ে তোলে দালানকোঠা। অনেক কাঠখর  পেরিয়ে এটি আজ সেই পূর্বের চেহেড়ায়। এছাড়া নগরীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবকটি ছড়া এখন তার পুরোনো চেহাড়া ফিরে পেয়েছে।
ঝালোপাড়া সড়ক এখন লন্ডনের টেমস নদী ঘেষা নান্দনিক সড়কগুলোর মতো। কে জানতো এই পথ এতো আধুনিক হবে? কিন্তু আজ তা বাস্তব।  গাড়ি চালিয়ে  কদমতলী পয়েন্ট থেকে ঝালোপাড়া সড়ক হয়ে  এখন ২মিনিটে ক্বীন ব্রিজের নিচে আসা যায়।
সিলেট নগরীতে প্রথম চার লেনের সড়ক হচ্ছে হুমায়ুন রশীদ স্কয়ার থেকে টার্মিনাল হয়ে ক্বীন ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক।  সড়কটি হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে উন্মক্ত হবে। তখন দক্ষিন সুরমা উত্তর সুরমায় আর পার্থক্য থাকবেনা। টেমসের দু’পাড়েই যেভাবে আধুনিক শহড় গড়ে উঠেছে তেমনই মনে হবে নতুন নান্দনিক এই সিলেটকে।

প্রশ্ন হলো,এই কাজগুলো কে করেছে? উত্তর হচ্ছে-অবশ্যই বর্তমান সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ্য নেতৃত্বে আর সিলেটের শ্রদ্ধাভাজন জননেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এতো উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে কারোও দ্বিমত নেই।

তবে কথা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আর সিলেটের শ্রদ্ধাভাজন জননেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল প্রথম দফায় ক্ষমতায় ছিলেন। তখন উন্নয়ন হলোনা কেন?
এখানেই পার্থক্য । আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথম টার্মে পুরো সময় মেয়র ছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ঐ সময়টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  ও অর্থমন্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে যে পরিমান উন্নয়ন সাধিত হওয়ার কথা ছিলো তা  হয়নি। এমন কোন কর্মকান্ড চোখেও পড়েনি।
সিটি করপোরেশন যুগের  প্রথম ৫ বছর বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো। সে সময় মেয়র কামরান আক্ষেপ করে প্রায়ই বলতেন দল ক্ষমতায় নেই সিলেটের জন্য কিছুই করতে পারছিনা। বিএনপি সরকার আমাকে সুযোগ দিচ্ছে না।’
কিন্তু এরপর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। তিনি আরো ৫ বছর ছিলেন আওয়ামীলীগের সময়। ফলাফল সেই শূণ্য।
২০১৩ আর আগের ১০টি বছর উন্নয়বিহীন থাকে সিলেট।  সেই সরু গলি, যানজট, জলজট, হকারদের, রাজত্ব , পরিকল্পনাহীন নগরায়ন, এ যেন জঞ্জাট আর জঞ্জাট।
অন্যদিকে, মাত্র আড়াই বছর সিলেট নগরীর দ্বায়িত্বে ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী (বাকি সময়টা কাটিয়েছেন জেলের ভেতর)। তার সাফল্য বিস্ময়কর। উপরের যে উন্নয়ন কাজগুলোর কথা বলা হয়েছে সবই আরিফুল হকের উন্নয়ন চিন্তা-চেতনার ফসল। নিজে মাঠে নেমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।  বর্তমান সরকার তার উন্নয়ন ভাবনায় বাদ সাধেনি। তাকে অর্থ দিতে কোন কার্পণ্য করেনি অর্থমন্ত্রী। তিনি কোন অন্যায় আবদার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে যাননি। তার ভাবনায় ছিলো শুধু উন্নয়ন।  নগর পরিবর্তন করতে অসংখ্য পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রীর কাছে। অর্থমন্ত্রী তার পরিকল্পনা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। একের পর এক প্রকল্প ছাড় করিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রনালয় থেকে। সাদা মনের মানুষ অর্থমন্ত্রী একবারও ভাবেননি আরিফ বিএনপির লোক। তার কাছে মনে হয়েছে আরিফ কাজের লোক। কর্মঠ মানুষ। আরিফের আড়াই বছরের মেয়াদকালীন সময়ে সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে  অর্থমন্ত্রীকে একবারও ভাবতে হয়নি।

আজ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জোর দিয়ে বলছেন নগরীর সব উন্নয়ন অর্থমন্ত্রী তথা আওয়ামীলীগের অবদান। এ কথা শতভাগ সত্য।  এই আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরাই আবার বলছেন,‘ আরিফুল হক চৌধুরীর কোন অবদান নেই এ কথাও আমরা অস্বীকার করিনা। তার দক্ষতার কারনে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো গেল আড়াই বছরে দৃশ্যমান হয়েছে।
কাগজে-কলমে ৩০ জুলাই যে নির্বাচন হবে তা নৌকা আর ধানের শীষের লড়াই।  তবে  মূল লড়াই হবে “কামরানের দশবছর  আরিফের আড়াই বছর।”
সচেতন ভোটাররা এই দশ বছর আর আড়াই বছরের হিসেব নিয়েই  চিনবেন,  কে এই আরিফ?

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট