লিটু হত্যাকাণ্ডের দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না

প্রকাশিত: ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০১৭

লিটু হত্যাকাণ্ডের দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না

মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার থেকে : বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষে গুলিতে নিহত খালেদ আহমদ লিটু (২৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। তবে বিভিন্ন কারণ সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কারও ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক কারণ নাকি অসাবধানতাবশত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে বেরিয়ে যাওয়া গুলিতে লিটুর মৃত্যু হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য, মামলার এজাহারের বিষয়বস্তু এবং নিজ গ্রুপের নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা দায়েরের ঘটনায় লিটুর মৃত্যু রহস্য শুধু ঘনীভূত হচ্ছে। পুলিশ এ ঘটনায় এজাহারনামীয় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। পুলিশি অভিযানে পৌর শহরের কলেজ রোড ঘটনাস্থলের দেড়শ’ হাত দূরে লাভলী স্টোর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি রিভলবার ও ছাত্রলীগ কর্মী সাহেদের নয়াগ্রামের বাড়ি থেকে দুইটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, ‘পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রটি লিটু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়নি। এ ঘটনায় যে অস্ত্রটি ব্যবহৃত হয়, তা এখনো আমরা খুঁজছি।’ তিনি বলেন, ‘লিটুর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে আমরা কাজ করছি। এখন গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে নিলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নিজের অস্ত্র থেকে বের হওয়া গুলিতে লিটু নিহত হলে গুলির আঘাত সরলরেখায় না থেকে নিচ থেকে উপরের দিকে থাকতো। কিন্তু নিহতের চোখের নিচে লাগা গুলির আঘাত ছিল সরলরেখা বরাবর। যার কাছে আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল, সে হয়তো লিটুর ডানদিকে কিছুটা আড়াআড়ি অবস্থানে ছিল বলে মনে হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, লিটু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা খলিলুর রহমান বাদী হয়ে সাতজনকে এজাহারনামীয় এবং অপর অজ্ঞাতনামা আরো পাঁচজনকে আসামি করে বিয়ানীবাজার থানায় হত্যা মামলা (নং-১৩) দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারনামীয় আসামি ফাহাদ আহমদ, কামরান হোসেন, এমদাদ হোসেন, কাওছার আহমদ, দেলোয়ার হোসেন মিষ্টু, শিপু ও সাহেদ ছাত্রলীগের পাভেল মাহমুদ গ্রুপের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে ফাহাদ, কামরান ও এমদাদকে ঘটনার পরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আটক করা হয়। অপর আসামি দেলোয়ারকে তার বাড়ি থেকে গ্র্রেপ্তার করা হয়। গত সোমবার বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের ১২০ নং কক্ষ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার নিহত খালেদ আহমদ লিটু একই গ্রুপের কর্মী। সে ছাত্র না হলেও ছাত্রলীগের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতো।
তদন্ত সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের পাভেল মাহমুদের গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিবদমান আবুল কাশেম পল্লব গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শেষে ওই কক্ষে অবস্থান করছিলেন। এ সময় কোনো উত্তেজনা না থাকায় তারা অনেকটা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে সেখানে বসে খোশগল্প করছিলেন। তখন ওই কক্ষে আরো ১২ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী ছিলেন। পুলিশের ধারণা, ওই কক্ষে আড্ডারত অবস্থায় কেউ তাকে গুলি করে পালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া যে চারজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা সবাই ওই কক্ষে ছিলেন বলেও তদন্ত সূত্রের দাবি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল হক আরো জানান, ‘ওই কক্ষে অবস্থান করা নিজ গ্রুপের কোনো কর্মীর সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিটি করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি করায় লিটুর মাথার পেছনের খোলস ফেটে মগজ বেরিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে।’ তিনি জানান, ‘কক্ষের ভেতরে এক জোড়া জুতা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।’
মঙ্গলবার বিকালে থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে নিহত লিটুর মাথায় পাওয়া গুলিটি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এটি হাতে পাওয়ার পর অনেক বিষয় পরিষ্কার হবে।’
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ জানান, ‘পুলিশি তদন্তে তারা সহায়তা করছেন। কলেজ প্রশাসন গঠিত তদন্ত দলের সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলেছেন। কলেজের নিরাপত্তায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এদিকে গতকাল বিকালে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান নিহত লিটুর বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন এবং সৃষ্ট ঘটনার সুষ্ঠুু বিচারের আশ্বাস দেন। অপরদিকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ এবং সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান হোসেন এক বিবৃতিতে জানান, ‘পাভেল মাহমুদ জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন-বিষয়ক সম্পাদক। তবে নিহত লিটু বহিরাগত সন্ত্রাসী। সে তার নিজের আগ্নেয়াস্ত্রে গুলি ভরতে গিয়ে গুলিতে মারা যায়। তাই এ হত্যাকাণ্ডের দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না।
গত সোমবার বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষ থেকে বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। সে পৌর এলাকার কসবা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট