রাতের আঁধারে যেভাবে এনেক্স ভবনের সামনে বসানো হলো গ্রিক দেবীর মূর্তি

প্রকাশিত: ৪:২৪ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০১৭

রাতের আঁধারে যেভাবে এনেক্স ভবনের সামনে বসানো হলো গ্রিক দেবীর মূর্তি

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে থেকে সরানো ভাস্কর্যটির (মূর্তি) জায়গা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে। হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থী দলের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভাস্কর্যটি অপসারণ করার পর থেকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা অবস্থায় এনেক্স ভবনের পেছন দিকে রাখা হয়েছিল।

গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে গড়া ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি অপসারণ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী, সংস্কৃতি কর্মী এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।খবর বিবিসির।

বিক্ষোভের সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবারও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

আদালতের এনেক্স ভবন এলাকায় ভাস্কর্যটি স্থাপন করার সময় সেখানে ছিলেন এর নির্মাণ শিল্পী ভাস্কর মৃণাল হক। তিনি ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন কর্মকাণ্ড এবং স্থাপনের পরের ছবি সামাজিক মাধ্যমেও দিয়েছেন।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার পর তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

প্রতিবাদের মুখে ভাস্কর্য তো সরিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গে মৃণাল হক বলেছিলেন, ‘এটা করতে হচ্ছে, কারণ অনেক প্লাস-মাইনাস, হিসেব-নিকেশের ব্যাপার আছে।’

জানা যায়, পিকআপে করে ভাস্কর্যটি রাত দশটার দিকে এনেক্স ভবনের সামনে নিয়ে আসা হয়। পরে ভার উত্তোলক যন্ত্র দিয়ে পিকআপ থেকে ভাস্কর্যটি নামানো হয়। এ সময় ভাস্কর্য প্রতিস্থাপনের কাজ তদারকি করেন এর শিল্পী মৃনাল হক নিজেই। মোট ২৭ জন শ্রমিক এই কাজে অংশ নেয়।

ভাস্কর্য স্থাপন শেষে ঝালাইয়ের কাজ শুরু হয় রাত ১১টা ৪০ মিনিটে। রাতেই এর কাজ শেষ হয়।

এদিকে ভাস্কর্যটি প্রতিস্থাপনের আগে রাত ৮টা থেকে সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সুপ্রিমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারি ছাড়া ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীসহ কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। ভাস্কর্য স্থাপনের সময়ও এর আশপাশে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাত ১২টা  ৪০ মিনিটে সুপ্রিমকোর্টের ফটকে (বার কাউন্সিল সংলগ্ন) এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের ভাস্কর মৃণাল হক বলেন, এটা এখানে বসানোর জন্য আজ (শনিবার) সকালে আমাকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে (এনেক্স) বসানো না বসানো সমান কথা। কারণ এখানে এটিকে কে দেখবে?

কাদের নির্দেশে এনেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্য বসানো হয়েছে-এমন প্রশ্নে মৃণাল হক বলেন, সুপ্রিমকোর্ট অথরিটির নির্দেশে এখানে বসানো হয়েছে। আর যারা সরাতে বলেছিল তারাই এখানে (এনেক্স) বসাতে বলেছে।

ভাস্কর্যটিকে প্রতিস্থাপন অনুভূতির বিষয়ে জানতে চাইলে মৃণাল হক বলেন, একটা মানুষ মারা গেলে তাকে কবরে দিয়ে এলে যে অনুভূতি হয়, আমারও সেই অনুভ’তি হচ্ছে। তবুও ভাস্কর্যটা নিজের পায়ে দাঁড়াবে এটাই বড় কথা।

তিনি আরো বলেন, আমরা লুকিয়ে, গোপনে এটি প্রতিস্থাপন করলাম। কেন এত লুকানো, কেন এত গোপনীয়তা?

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের শেষ দিকে গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে গড়া ন্যায়বিচারের প্রতীক এই ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছিল। ভাস্কর্যটি অপসারণের জন্য হেফাজতে ইসলাম দাবি জানিয়ে আসছিল।

হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা ঢাকায় বিক্ষোভ করে এবং রোজা শুরুর আগে এটি সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেয় সরকারকে।

সংগঠনটির আমির আহমদ শফি এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

এই প্রেক্ষাপটে ভাস্কর্যটি সরানো হলে তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রীয়া দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও মিছিল করার চেষ্টা করে প্রতিবাদকারী কিছু মানুষ। তবে পুলিশ জল কামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট