২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে (ভিসি) ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বেতন-ভাতাবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর চৌহাট্টাস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে এ আল্টিমেটাম দেন তারা।
বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্মা কাজী মাসুদ। তিনি বলেন- আমরা সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে অত্যন্ত সূচারুভাবে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশন জট তৈরী হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন মুকুল মহোদয়ের আশ্বাসে বিনা বেতন-ভাতায় আমরা কাজ করেছি। একটি দিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখিনি। সাবেক ভিসি আমাদেরকে একাধিকবার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন। সাবেক ভিসি আমাদের বিশ্বাস জন্মাতে ২০২৩ সালের ২৬ জুন শূণ্য পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৭ জুন আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন । আজ অবদি সেই দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এমতাবস্থায় আমরা চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামি। এক পর্যায়ে সাবেক ভিসি ও রেজিষ্ট্রার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে কাজে যোগ দেই ।
কাজী মাসুদ আরও বলেন- ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হলে সাবেক ভিসি এনায়েত ও রেজিষ্ট্রার গা ঢাকা দেন। তিনি জানান সাবেক ভিসি এনায়েত স্বৈরশাসক হাসিনার ব্যক্তিগত চোখের চিকিৎসক ছিলেন। আর রেজিষ্ট্রার ফজলুর রহমান ছিলেন এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও টিলাগড় গ্রুপের ক্যাডার। দুজনই ফ্যাসিস্টের দোসর হওয়ায় জনরোষ থেকে বাঁচতে লাপাত্তা হয়ে যান। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনরতরা ফ্যাসিস্টের দোসর ভিসি এনায়েত ও ফজলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিষ্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগ করেন। প্রায় ৪ মাস পর ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ভিসি ডা. এনায়েত হোসেন ক্যাম্পাসে ফেরেন। খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে এসে তাদের চাকরি স্থায়ী ও বেতন ভাতার বিষয়ে ভিসির কাছে জানতে চান। এক পর্যায়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন বেতন বঞ্চিতরা। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই ও জেলা প্রশাসকের মনোনীত প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. নূরের জামান চৌধুরীর উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন ভিসি অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর মেহেদী অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নিতে আমাদের অনুরোধ করেন। মেজর মেহেদীর অনুরোধে ও ভিসির আশ্বাসে আমরা অবরোধ তুলে নেই।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী মাসুদ জানান- ভিসির আশ্বাসের ১৫ দিনের ডেডলাইনের ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ইতোপূর্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতাদি প্রদান প্রসঙ্গে একটি সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এছাড়াও উক্ত সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সকল সম্মানিত সদস্যের মূল্যবান আলোচনার প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে আদালতের নির্দেশনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিধি-বিধান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এর নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে বর্ণিত নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিনি বলেন- এমতাবস্থায় ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে দৈনিক ইত্তেফাক ও সিলেটের ডাক পত্রিকায় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদন জমা প্রদানের শেষ সময় ছিলো ১৯ ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আমরা আবেদনপত্র জমা দেই। এরপর ২০ ডিসেম্বর ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ পত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারী আমরা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ভাইভা পরীক্ষার বোর্ড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ছাড়াও বিএমএন্ডডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি। তিনি যোগদানের পর গত ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সাথে চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে জানানোর পরও তার অনুপস্থিতিতে ২৩ মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন। তবে কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না হওয়ায় উক্ত রিপোর্টটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। এ সিন্ডিকেটের পর থেকে উপাচার্য মহোদয় চৌহাট্টাস্থ কার্যালয়ে অফিস করেননি। তিনি পূর্বের ভিসির রেখে যাওয়া স্বৈরাচার দোসরের মতালম্বী মানুষ দিয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়ে কাজী মাসুদ বলেন- তাই আমাদের দাবি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে উক্ত রিপোর্টের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করছি । এছাড়া উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দাবি আদায়ে ব্লকেড কর্মসূচীসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচি প্রদান করতে বাধ্য হবেন।
সংবাদ সম্মেলন সিলেট মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীগন উপস্থিত ছিলেন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D