১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২০
করোনা ভাইরাসের কারণে সব বন্ধ হওয়ায় তাদের রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ই তারা জানতে পারেন, পাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজওয়ান হোসেন কাজলের বাড়িতে হুন্ডির মাধ্যমে আসা ২০-২২ লাখ টাকা আছে। ধারণা মাত্রই ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে ভুল ভাঙে তাদের।
৩০ হাজার টাকা ও কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া কিছুই পায়নি চক্রটি। ধর্ষণ করেন মা ও দুই মেয়েকে। চিনে ফেলায় পরে মাসহ দুই মেয়ে ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে হত্যা করেন তারা।
গাজীপুরে মা ও তিন সন্তানসহ চাঞ্চল্যকর চার খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কাজিম উদ্দিন (৫০), মো. হানিফ (৩২), মো. বশির (২৬), মো. হেলাল (৩০), ও এলাহি মিয়া (৩৫)।
গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা (৩৮), দুই মেয়ে নূরা (১৭), হাওয়ারিন (১৩) এবং এক ছেলে ফাদিলের (৮) গলা কাটা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রোববার (২৬ এপ্রিল) রাতে শ্রীপুরের আদাবর এলাকা থেকে মূল হোতা পারভেজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পারভেজের (১৭) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের বাড়ি থেকে লুট করা মালামাল ও আসামিদের পরিধেয় বস্ত্র (রক্তমাখা) যথাক্রমে নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি হলুদ রঙের গেঞ্জি, একটি জিন্স প্যান্ট, তিনটি লুঙ্গি এবং একটি আংটি উদ্ধার করা হয়।
পারভেজ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারত কাজিম উদ্দীনের ছেলে। ঘটনার সময় কাজলের বড় মেয়েকে বাবা ও ছেলে মিলে ধর্ষণ করেছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জানিয়ে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এরা সবাই মাদকসেবী। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সকলেই জুয়াড়ি এবং ভিকটিমের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মাদকসেবন ও আড্ডা দিত। এছাড়া ভিকটিমদের তারা নানাভাবে হয়রানি করত।
তিনি জানান, কাজিমের ছেলে পারভেজ ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামি। আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ির খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকর্মী ধরেছিল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, কয়েক দিন আগে গ্রেফতাররা জানতে পারেন, কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। এমন একটি ধারণা থেকে ঘটনার ৫ থেকে ৭ দিন আগে কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়। কাজলের বাড়িতে বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যদের ডেকে নিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। এদের দলে কাজিমের ছেলে পারভেজও ছিলেন।
বর্তমানে তাদের আয়ের মাধ্যমে নেশা ও জুয়ার টাকা সংকুলান না হওয়ায় এমন অপরাধ সংগঠনে যুক্ত হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারার জানিয়েছে বলে জানান সারওয়ার বিন কাশেম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল রাতে প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিঁড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পেছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পেছনের গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন।
কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলেন। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানান।
পরে ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া ৩০ হাজার টাকা বের করে দেন। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বর্ণালঙ্কারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামিরা।
অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামি বশির ও এলাহিসহ আরও একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া আসামি বশিরসহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন। আসামি পারভেজও হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণে অংশ নেন। জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় আরও ৩ থেকে ৪ জনের নাম এসেছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা তাদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকে হত্যা করা নিয়ে আসামিদের ভেতর দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংশয় তৈরি হয়। কিন্তু কোনো প্রকার সাক্ষী যেন না থাকে সে জন্য প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকেও হত্যা করা হয়।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D