জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আস্থাহীনতার ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ১:২৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২০

জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আস্থাহীনতার ইঙ্গিত

করোনা সংক্রান্ত সব কিছু মনিটর করবেন সচিবরা। আর সমন্বয় করবেন ডেপুটি কমিশনাররা (ডিসি)। তাহলে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কী হবে? তাদের প্রতি কি প্রধানমন্ত্রী আস্থা হারিয়েছেন?

এর জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি বলেন,‘সরকারের কাজ প্রশাসনের মাধ্যমে হয়। এটাই নিয়ম। প্রধানমন্ত্রী নিয়ম মেনেই আদেশ দিয়েছেন। এটা জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আস্থাহীনতার কোনো বিষয় নয়। জনপ্রতিনিধিরাও সব কাজে থাকছেন।

তবে একাধিক দায়িত্বশীল পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় খাদ্য সাহায্য ও ত্রাণ বিতরণে জন প্রতিনিধি বিশেষ করে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আর সেই জায়গা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নতুন এই নির্দেশনা।

সারাদেশে ওএমএস ও ত্রাণের চাল চুরির ঘটনায় খাদ্যমন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১৭ এপ্রিল জমা দেয়া ওই রিপোর্টে খাদ্য সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে বেশ কিছু অনিয়ম ও ফাঁক খুঁজে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, ওজনে কম দেয়া, তালিকা অনুযায়ী বিতরণ না কারার মতো অনিয়ম পেয়েছে কমিটি। বিশেষ করে তালিকা তৈরিতে অস্বচ্ছতা এবং বিতরণের সময় দায়িত্ব প্রাপ্তরা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান বলেন,‘সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের এইসব খাদ্য সহায়তা কমিটির উপদেষ্টা হলেন সংসদ সদসরা। এছাড়া আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা কমিটির সভাপতি। তাদের সঙ্গে থাকেন ইউপি মেম্বাররা।

জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিরাই তালিকা ও বিতরণের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সাথে একজন সরকারি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) থাকার কথা। মজিবর রহমান বলেন,‘আমাদের মনে হয়েছে, যাদের সরাসরি তদারকি করার কথা ছিল, তারা হয়ত করোনার কারণে তদারকি করেননি, সশরীরে থাকেননি। তালিকার লোক চাল পেলো কিনা, কারা পেলো, চাল কোথায় গেল তারা এসব কিছুই দেখেননি বা তদারকি করেননি। ফলে বাইরে চাল বিক্রির খবর আমার জানতে পারি।’

কী পরিমাণ চাল বাইরে বিক্রি হয়েছে বা কতগুলো মামলা হয়েছে তা তারা হিসাব করেননি। তারা কিছু ঘটনা ধরে তদন্ত করেছেন।

তবে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানান, এখন পর্যন্ত চাল বাইরে বিক্রি বা চুরির ঘটনায় সারাদেশে ৩৯টি মামলা হয়েছে। আরো মামলা হচ্ছে। তবে এসব মামলার ঘটনায় কী পরিমাণ চাল উদ্ধার করা হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন,‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের এইসব মামলা তদন্ত করে চার্জশিট হবে, বিচার হবে। আর আমরা এরই মধ্যে দায়ী অনেকের ডিলারশিপ বাতিল করেছি। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাইরেও আরো অনেক সংস্থা এই চালের সঙ্গে যুক্ত। তদন্তে তাদের বিষয়ও বেরিয়ে আসবে।’

আর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মামুদ জানান,‘সারাদেশ থেকে আমরা এখনো চাল বাইরে বিক্রি বা চুরির তথ্য পাচ্ছি। এটা নানা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হতে পারে। এখনো কত চাল উদ্ধার বা চুরি হয়েছে তার পূর্নাঙ্গ তথ্য প্রস্তুত করিনি।’

তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গত সপ্তাহের তথ্য অনুযায়ী, তাদের অভিযানে সরকারের বরাদ্দের চুরি হওয়া দুই হাজার ১৭৪ বস্তা চাল উদ্ধার হয়েছে। প্রতি বস্তায় সাধারণত ৫০ কেজি করে চাল থাকে। এইসব ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাব আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, এখন উদ্ধার হওয়া চালের পরিমাণ ও গ্রেফতারের সংখ্যা আরো বেড়েছে।

এসব প্রসঙ্গে নিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন,‘ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি এটা তো জনপ্রতিনিধিদেরই দেখতে হবে। তারা যদি এটা না দেখেন তাহলে তো তারা দায়িত্ব পালন করছেন না। তবে এই কারণে তাদের এইসব কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়নি। তারা তালিকা করবেন, বিতরণের সময় থাকবেন। এগুলো তাদের কাজ।’

এই কাজ সঠিকভাবে করার জন্য, ৬৪ জেলার করোনা সংক্রান্ত সব কাজ সুপারভাইজ করার জন্য ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ডেপুটি কমিশনাররা সমন্বয় করবেন বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণসহ নানা বিষয়ে তালিকা করবেন। সরেজমিন বিতরণ করবেন। পুরো কাজ যাতে সঠিকভাবে হয়, সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। সূত্র : ডয়চে ভেলে

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট