রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির যুগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪

রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির যুগে বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো হৃদরোগ চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি (রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানো) যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।

গত রোববার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রথমবারের মতো রোবটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে রিং পরানো হয়েছে। হাসপাতালটির সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে একটি বিশেষায়িত দল এ কার্যক্রম সম্পাদন করে।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির নেতৃত্বদানকারী চিকিৎসক প্রদীপ কুমার কর্মকার।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দুজন হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর প্রধান ধমনিতে বিনামূল্যে রোবটিক পদ্ধতিতে রিং পরানো হয়। এ চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্বোধন করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান মিলন ও কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন উল্লুবি।

রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি যেকোনো দেশের জন্য যুগান্তকারী ও সর্বাধুনিক হৃদরোগ চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলো। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিশ্বে ১৬০টি দেশে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ভারতে ছয়টি সেন্টার রয়েছে। এ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল রোবোটিক যুগে পদার্পণ করল।

এ বিষয়ে ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি বর্তমান পৃথিবীতে হার্টের রিং পরানোর সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তি। কার্ডিওলজিস্টরা এখনো ক্যাথল্যাবে রোগীর কাছে থেকে রোগীদের হার্টের রিং পরান। এর সর্বশেষ আবিষ্কার হলো রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি অর্থাৎ রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানো। এর মাধ্যমে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীর চেয়ে দূরে থেকে নিখুঁতভাবে হৃদরোগীদের হার্টের ধমনিতে রিং পরান। এ রোবটের দুটি অংশ থাকে– একটি হলো রোবটের একটি হাত, যা ক্যাথল্যাবে থাকে। আরেকটি থাকে কন্ট্রোল সেকশন, যেখান থেকে মূল কার্ডিওলজিস্ট পুরো রিং পরানোর কার্যক্রমটি দূর থেকে সম্পন্ন করে থাকেন।

তিনি বলেন, রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি বা রোবট দিয়ে হার্টের রিং পরানোর তিন ধরনের সুবিধা আছে। একটি হলো রোগীর জন্য সুবিধা, আরেকটি হলো কার্ডিওলজিস্ট, যিনি রিং পরান তার জন্য সুবিধা এবং তৃতীয়টি হলো দেশের জন্য সুবিধা। রোগীদের প্রথম সুবিধা হলো, হার্টের রিং পরানোর জটিল প্রক্রিয়াটি রোবটের মাধ্যমে খুব সুক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে করা যায়। অনেক সময় হার্টের রিং নিখুঁতভাবে পজিশন করার জন্য এক মিলিমিটার সামনে অথবা এক মিলিমিটার পেছনে নেওয়ার প্রয়োজন হয় কিন্তু হাত দিয়ে করলে নিখুঁতভাবে এ কাজ করা কঠিন হয়। রোবটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে এটি সম্পন্ন করা যায়।

ডা. প্রদীপ কুমার বলেন, রোগীদের জন্য আরেকটি সুবিধা হলো হৃদরোগ চিকিৎসকরা সরাসরি এনজিওপ্লাস্টি করতে গেলে যে সময় লাগে, রোবটের মাধ্যমে সেটি করতে সময় অনেক কম লাগে। এতে অল্প সময়ে বেশি রোগীর চিকিৎসাও দেওয়া যায়। হার্টের ভেতরে ক্যাথেটার, ওয়্যার (তার), বেলুন, রিং যত কম সময় রাখা যায় রোগীর জন্য তত নিরাপদ। তাই রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রিং পরাতে সময় কম লাগে বলে জটিলতাও কম হয়।

প্রসঙ্গত, রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির বিষয়ে দেশে প্রথম প্রশিক্ষণ নেন হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার। ভারতের হায়দ্রাবাদ অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপরই তার নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়।

প্রদীপ কুমার কর্মকারের আরও কীর্তি

এর আগে ট্রান্স ক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট (টিএভিআর) বা বুক না কেটে হার্টে ভালভ প্রতিস্থাপন করে আলোচনায় আসেন জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার। ২০২১ সালের ২৫ ও ২৬ অক্টোবর তার নেতৃত্বে সফলভাবে এ অপারেশন সম্পন্ন হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল (২০২২ সাল) জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে তিনি বুক না কেটে টিএভিআর পদ্ধতিতে পুরোনো অ্যাওর্টিক ভালভের ভেতর নতুন ভালভ প্রতিস্থাপন করে আলোচনায় আসেন।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট