৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২২
জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয় বা কম ব্যবহারের কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় এটা করতে হচ্ছে।
সারাদেশে এলাকাভিত্তিক দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি দেয়া হয়েছিল, তা এরই মধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, এলাকাভিত্তিক দিনে এক ঘণ্টা করে বিদ্যুতের লোডশেডিং করা হবে। কিন্তু এজন্যে সরকার যে সময়সূচি ঘোষণা করেছিল, কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। সারাদেশে মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন।
শহরাঞ্চলে দুই তিন ঘণ্টা বা তারও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের কৃষক সোয়েবুর রহমান আট বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। তাদের অঞ্চলে লম্বা সময় ধরে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় তার জমিতে পানি সেচের প্রয়োজন। কিন্তু দিনে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিংয়ের কারণে তিনি সেচ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে তিন ঘণ্টা থাকে না। আবার বিদ্যুৎ এলে অল্প সময় পরই চলে যায়। জমিতে সেচের পানি দিতে পারছি না।’
উত্তরের জেলা বগুড়া থেকে একজন উদ্যোক্তা মাসুমা ইসলাম নিজে নানা ধরনের আচার তৈরি করে তা বাজারজাত করেন। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তার পণ্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে এবং তার জীবন যাত্রা থমকে গেছে। তিনি বলছেন, ‘দিনে চার পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। মানে এই যাচ্ছে-আসছে, এরকম অবস্থা।’
দেশের দক্ষিণ বা অন্য অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকাতেও অনেক এলাকায় এক ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ এবং শহরাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলোও বলছে, তারা চাহিদার তুলনায় অনেক কম সরবরাহ পাচ্ছেন এবং সেজন্য লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির জানিয়েছেন, সিলেটের জন্য চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন। সেজন্য লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় তারা সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সিলেটে আমরা চাহিদার ৫০ শতাংশ সরবরাহ পাচ্ছি। কোনো কোনো সময় ৬০ বা ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত পাচ্ছি। এই সরবরাহ দিয়ে শহরাঞ্চলে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে মানে তিন চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আর শহরের বাইরে পাঁচ ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিপর্যয় বা বিশৃঙ্খলার বিষয় অবশ্য কর্তৃপক্ষ স্বীকার করছে।
সরকারের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেছেন, জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে ১০০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। আরো ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম ব্যবহার করার বা সাশ্রয়ের কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দোকানপাট সন্ধ্যার পর বন্ধ রাখা এবং অফিস-বাড়িতে এসির ব্যবহার কমানোসহ মানুষের সহযোগিতা কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল।
কিন্তু মোহাম্মদ হোসাইন উল্লেখ করেছেন, এই কর্মসূচি শুরুর পর থেকে সাত দিনের পরিস্থিতি পর্যলোচনা করে তারা দেখেছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কর্মসূচি ব্যার্থ হয়েছে।
‘বিদ্যুতের সাশ্রয়ী কার্যক্রমের মাধ্যমে আসলে যে ১০০০ মেগাওয়াট সেভ করার কথা, সেই লক্ষ্যটা অর্জিত হয়নি।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনের বক্তব্য হচ্ছে, ‘দোকানপাট রাত ৮টায় মধ্যে বন্ধ হওয়ায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু আরো ৫০০ মেগাওয়াট সেভ করার লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘৫০০ মেগাওয়াট সাশ্রয় করতে না পারার কারণে লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
মোহাম্মদ হোসাইন জানিয়েছেন, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় না হওয়ায় সেটিও লোডশেডিং করতে হয়েছে।
সে কারণে অপরিকল্পিতভাবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল এবং সিডিউলও ছিল না বলে তিনি মনে করেন।
এখন তারা লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে চাইছেন।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানিয়েছেন, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এখন এক হাজার মেগওয়াট থেকে বাড়িয়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট করা হবে। এতে করে সারাদেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এবং সময় বাড়বে। এই পরিমাণটা বিদ্যুতের মোট চাহিদার ১০ শতাংশের মতো। এভাবে লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
কর্মকর্তারা আরো বলেছেন, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এবং সময় বাড়ানের পর তারা আবারো এক সপ্তাহের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
তবে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কর্তৃপক্ষ শীতকাল আসার জন্য অপেক্ষা করছেন।
সূত্র : বিবিসি
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D