শেষ হলো একাদশ কেমুসাস বই মেলা

প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০১৮

শেষ হলো একাদশ কেমুসাস বই মেলা

 একাদশ কেমুসাস বইমেলা শেষ হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর শহীদ সুলেমান হলে পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটলো লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের এই মিলনমেলা। গত ২০ মার্চ শুরু হওয়া ১২ দিনব্যাপি এ বইমেলায় সিলেটের বইপ্রেমী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিলো। লেখক পাঠকদের আড্ডায় মুখর ছিলো কেমুসাস প্রাঙ্গণ। মেলায় অংশ নিয়েছিলো ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রামের ৩৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
শনিবার সন্ধ্যায় বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী। বইমেলা উপকমিটির আহবায়ক আ ন ম শফিকুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সৈয়দ মবনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দৈনিক সিলেটের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক বিশিষ্ট গবেষক আবদুল হামিদ মানিক ও দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আজিজ আহমদ সেলিম।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী বলেন, আমাদের দেশে বইমেলাকেন্দ্রিক যে উৎসব হয়, তা দেখলে মনে হয় না বইয়ের পাঠক কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বইমেলা আজ একটি জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বইমেলায় প্রতিষ্ঠিত লেখকরা উপস্থিত থাকেন, তরুণ লেখকরা আড্ডা দেন, এই সুযোগে যারা বই কিনতে আসেন, তারা লেখকের স্বাক্ষরসহ বই সংগ্রহ করে আনন্দ পান। তিনি বলেন, তরুণ লেখকরা উন্মুখ থাকেন কখন ফেব্রুয়ারি মাস আসবে এবং নতুন বই বের করবেন। এই যে উদ্দীপনা, এটা তৈরি করে দেয় বইমেলা। বইমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে দেয়। বই পড়ায় যে অন্য রকম একটা আনন্দ আছে, কিশোর কিশোরদের এটা শিখিয়ে দেয় বইমেলা ও বইমেলাকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেমুসাসের সহসভাপতি মো. বশিরুদ্দিন ও সেলিম আউয়াল, কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট আব্দুস সাদেক লিপন, পাঠাগার সম্পাদক আহমদ মাহবুব ফেরদৌস ও কার্যকরী পরিষদের সিনিয়র সদস্য এডভোকেট মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী আরো বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। এর সংগ্রহশালা উপমহাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে প্রাচীন অনেক দলিল-দস্তাবেজ, যা ইতিহাসের মূল্যবান সম্পদ। তাই কেমুসাস শুধু লাইব্রেরি নয়, একটি গবেষণাকেন্দ্রও।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক সিলেটের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল হামিদ মানিক বলেন, বইমেলা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। দিনে দিনে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম যদি বইবিমুখ হয়ে যায়, তাহলে আমরা যে কাঙ্খিত সমাজ নির্মাণ করতে চাই, তা আর করতে পারবো না। আজ এক দিকে শিক্ষার হার বাড়ছে, অন্য দিকে সামাজিক অশান্তিও বাড়ছে। এটা প্রতিরোধ করতে পারে একমাত্র বই। তিনি বলেন, মানুষ পরিচালিত হয় তার বিবেকের তাড়নায়। আর সেই বিবেককে জাগ্রত করে বই। মেধা-মননশীলতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে বই। নতুন প্রজন্মের মেধা বিকাশ করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে বইয়ের বিকল্প নেই।
দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, গত ১১ বছর ধরে কেমুসাস বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামিতেও এই মেলা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও অব্যাহত থাকবে। এর ফলে সিলেটের শিক্ষার্থীরা বইয়ের প্রতি সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
সভাপতির বক্তব্যে আ ন ম শফিকুল হক বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটবাসীর এক অমূল্য সম্পদ। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে সিলেটের গৌরবময় ইতিহাস। দেশের প্রতিটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ প্রতিষ্ঠান সাহিত্য সংস্কৃতির সেবা করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আয়োজিত হচ্ছে বইমেলা। তিনি বলেন, বইমেলা সফল করতে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন, তা আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি সিলেটের মিডিয়াকর্মী, প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনকে কেমুসাসের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিগত ১২ দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ৭৩ জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার, সনদ ও মেডেল তুলে দেন অতিথিরা।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট