পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশ, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশ, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

Manual6 Ad Code

পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা। তবে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের সবার নাম প্রকাশ না হওয়ায় হতাশাও জানিয়েছেন তারা। শহীদ পরিবারের দাবি, সম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

Manual1 Ad Code

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে ‘বিডিআর তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশে শহীদ পরিবারের মতপ্রকাশ’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা এ দাবি জানান।

Manual7 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনেরা অভিযোগ করেন, তদন্তে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তারা নানামুখী সামাজিক ও অনলাইন হয়রানির শিকার হয়েছেন। স্বজনেরা জানান, এসব ঘটনার ফলে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তদন্তে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন টানা ১১ মাস কাজ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর একই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে বিআরআইসিএমের নতুন ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে কমিশন। এতে কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

Manual2 Ad Code

সোমবার রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খানের মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা, কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান আইনজীবী সাকিব রহমান, কর্নেল মুজিবুল হকের ছেলে মুহিব হক, বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া, মেজর কাজী মোসাদ্দেক হোসেনের মেয়ে কাজী নাজিয়া তাবাসসুম, কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান।

রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থে আর নিজের ক্ষমতাধর স্বার্থে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। মীর জাফরদের বিচার করা না হলে কিন্তু ভবিষ্যতে আরেকটা পিলখানা হত্যাকাণ্ড করার সুযোগ রয়েছে।

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন কমিশনের প্রধান জেনারেল ফজলুর রহমান গতকাল বলেছেন, প্রতিবেদনটি ‘ক্ল্যাসিফায়েড’ নয় এবং পরে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। শহীদ পরিবারের পক্ষে ডা. ফাবলিহা বুশরা প্রতিবেদনটি প্রকাশে যেন বিলম্ব না করা হয় এবং দ্রুত বিচার বিভাগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পাঠানো, সম্ভাব্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ট্রাভেল ব্যান নিশ্চিত করাসহ সব আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।

তিনি বলেন, ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের প্রাণহানি শুধুই একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, এটি জাতিগত বিপর্যয়। করদাতাদের অর্থে সংগঠিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করার যে ষড়যন্ত্র ঘটেছে, তার সত্য জানার অধিকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের আছে।

আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, কমিশন বলেছে কিছু নাম তারা পেয়েছে কিন্তু এই মুহূর্তে সেগুলো প্রকাশ করতে পারবে না। সেটার যৌক্তিকতাটা আমরা কিছুটা বুঝি। তবে আমার মনে হয় না যে এটাকে অজুহাত দেখিয়ে অনেক দিন ধরে সেই নাম প্রকাশ হবে না। সেটা কোনোভাবে আমরা মেনে নেব না। প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে না আসে তাহলে শঙ্কা রয়েছে, যাদের নাম এসেছে তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব সব ব্যক্তি, সামরিক ও বেসামরিক সবার বিরুদ্ধে যেন অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করা হয় এবং তারা যেন অ্যারেস্ট হয়।

মুহিব হক বলেন, ডিফেমেশন শুধু আইনি শব্দ না, এটা একটা অস্ত্র। এই অস্ত্রটা ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে।

কাজী নাজিয়া তাবাসসুম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর হত্যার শিকার সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারগুলো অবহেলা, ভান করা সহমর্মিতা আর মিথ্যা আশ্বাসই পেয়েছে। এখনো পরিবারগুলো পুরো আস্থা পায় না, কারা সত্যিকার অর্থে তাদের পাশে আছে।

Manual3 Ad Code

আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, প্রতিবেদনের পর দেশের জনগণ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ দেশের মানুষ একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বলবে যে আওয়ামী লীগ এই হত্যাকাণ্ড করেছে। শেখ হাসিনা এই হত্যাকাণ্ড করেছে। ভারত এর সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি সরকারের কাছে দাবি করব, যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে সেটি যেন দ্রুত সময়ে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code