জগন্নাথপুরে কুশিয়ারায় ভাঙন, বিপর্যস্ত নদীতীরবর্তী পরিবার

প্রকাশিত: ৭:০৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২৫

জগন্নাথপুরে কুশিয়ারায় ভাঙন, বিপর্যস্ত নদীতীরবর্তী পরিবার

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীব্র ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নদীতীরবর্তী পরিবারগুলো। প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি, বসতভিটা ও ঘরবাড়ি। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে কৃষক পরিবারগুলো—নিয়ে নিচ্ছে জীবিকা, ঘরদোর এবং বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু।

রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদের তীরবর্তী বাগময়না, রানীগঞ্জ বাজার, স্বজনশ্রী, ইসমাইল চক, বাউধনসহ আশপাশের বহু গ্রামে চলছে এই ভাঙনের ভয়াবহতা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাইলগাঁও ইউনিয়নের রানীনগর, পাইলগাঁও, জালালপুরসহ প্রায় ৪০–৫০টি গ্রাম।

বাগময়না গ্রামের কৃষক বাবু মিয়া কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমার শেষ সম্বল ছিল চার বিঘা জমি—সেটাও গেল কুশিয়ারার পেটে। এর আগেও নদী কেড়ে নিয়েছে আরও ১২ বিঘা। এখন বসতভিটাও নেই। আমাদের সাতজনের সংসার কীভাবে চলবে, আল্লাহই জানেন।’

একই গ্রামের আনহার মিয়া বলেন, ‘ভাঙনে জমি চলে গেছে, বাড়িও গেছে। এখন বাকি জমিগুলোও হুমকির মুখে। আগে সংসার স্বচ্ছল ছিল, এখন প্রায় রাস্তায় উঠে আসার অবস্থা।’

বাগমানা গ্রামের আল আমিন নামের একজন জানান, তাদের এলাকার শতাধিক বিঘা জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও প্রায় ৩০০ বিঘা জমি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু আসে, দেখে—কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। তিনি বলেন, ‘জিও ব্যাগ ফেলানো গেলে অনেক জমি বাঁচত।’

নদীগর্ভে বসতভিটটা বিলীন হয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত দোলন মিয়া নামের একজন বলেন, ‘আমার জমি, এমনকি ছয় শতাংশ বসতভিটাও নদীতে চলে গেছে। এখন রাস্তার পাশে দুইটা টিনের ঘর তুলে কোনোমতে বসবাস করছি। জমি কেনা বা ঘর বানানোর সামর্থ্য নেই।’

রানীনগর গ্রামের বুলাই জানান, নদী এখন একদম ঘরের পেছনে চলে এসেছে। যেকোনো সময় বসতভিটা গিলে ফেলবে। আগে তিন বিঘা জমি ছিল, তাও নেই।

বাগমনা গ্রামের ইউপি সদস্য তেরা মিয়া বলেন, ‘এই ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা ও দুই শতাধিক বসতভিটা। এক সপ্তাহে নদীতে বিলীন হয়েছে ১৫টি ঘর ও শতাধিক বিঘা আবাদি জমি। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

জগন্নাথপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী সবুজ চন্দ সীল জানান, ‘কুশিয়ারা নদী ভাঙন হচ্ছে, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চেয়েছি। জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।’