মঙ্গলবার থেকে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

প্রকাশিত: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৫


সিলেটে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। ৬ দফা দাবিতে তারা এ ধর্মঘট আহবান করে।

সোমবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্টিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম।

তিনি তার বক্তব্যে জানান, সিলেটের গণপরিবহণ-পণ্যপরিবহণ ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিকরা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকেই বিভিন্নভাবে বঞ্চিত অবহেলিত। আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে সিলেটের কোটি মানুষের নেমে আসে অবর্ননীয় দুর্ভোগ। ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলেটের সব পাথর কোয়ারি। বর্তমানে লাখ লাখ কর্মহীন মানুষের কারণে সিলেটে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে এ অঞ্চলে। অন্যদিকে রিজার্ভের বিলিয়ন ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। তারা পাথর কোয়ারি খোলে দেওয়ার দাবিতে বারবার আন্দোলন সংগ্রাম করে ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পরেও তারা জুলুম নির্যাতন ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাননি।

তিনি জানান, সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারায় যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তা মালিক শ্রমিককে ধ্বংসের নীল নকশা। একইভাবে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট বেসরকারি প্রতিষ্টানকে দেওয়া আরেক হয়রানী ও ষড়যন্ত্র। তাছাড়া গাড়ি তল্লাশির নামের পুলিশ ট্রাক শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত হয়রানী করছে।

এসব কারণে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথর সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ৬ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলেট জেলাজুড়ে পরিবহণ কর্মবিরতি (ধর্মঘট) আহবান করেছেন।

তিনি জানান, আমরা পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হচ্ছে, সড়ক পরিবহণ আইন ২-১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০, ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যানের ক্ষেত্রে ১৫ ও সিএনজি ইমা ও লেগুনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল, সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহণের উপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার, সিলেটের সব ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুতের মিটার ফেরত ও ভাংচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর-বালুর ক্ষতিপূরণ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রত্যাহার এবং বালু পাথরসহ পণ্যবাহি গাড়ির চালকদের হয়রানি না করা।

এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবহনখাত সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সিলেটের পাথরকোয়ারি খুলে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আহত পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাখান করেছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান আহমদ। ধর্মঘট প্রত্যাখান করে বাস চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

রবিবার (৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনালে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান লোকমান আহমদ।

তিনি জানান, মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া শ্রমিক কর্মবিরতি ও ধর্মঘটে তারা অংশ নেবেন না। বরং তাদের মালিকানাধীন যানবাহন সড়কে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

লোকমান আহমদ দাবি করেন, চলমান কর্মবিরতি ও ধর্মঘট প্রকৃতপক্ষে মালিক ও শ্রমিকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে আহ্বান করা হয়নি। বরং এটিকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের ব্যবহার করে পাথর কোয়ারির আন্দোলন করছেন, তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের প্রশাসনের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন। এটি সুস্পষ্টভাবে একটি দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টা।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট