ওসমানীনগরে প্রবাসী মাসুক হত্যায় চার ভাইসহ ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২৫

ওসমানীনগরে প্রবাসী মাসুক হত্যায় চার ভাইসহ ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড

সিলেটের ওসমানীনগরে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে প্রবাস ফেরত শেখ মাসুক মিয়া হত্যা মামলায় তাঁরই চার ভাই ও ২ ভাবিসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এ রায় ঘোষণা করেন।

অত্র আদালতের বেঞ্চ সহকারি মো. সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের ৮ আসামির একজন পলাতক রয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন-ওই উপজেলার ফতেহপুর গুপ্তপাড়া গ্রামের মৃত শেখ মদরিছ আলীর ছেলে ও নিহতের ভাই শেখ আলফু মিয়া (৪১), তার সহোদর শেখ পংকী মিয়া (৪৩), শেখ তোতা মিয়া (৫৭), শেখ আব্দুর রব ওরফে লেবু মিয়া (৬৩), শেখ পংকী মিয়ার স্ত্রী লাভলী বেগম, আব্দুর রউফ ওরফে লেবু মিয়ার শেখ আনোয়ারা বেগম ওরফে এশাই (৪৮), একই এলাকার মৃত আখলাছ আলীর ছেলে ফখর উদ্দিন ওরফে অহর (৪৬) এবং উপজেলার গ্রামতলা দাসপাড়ার হাজি আলা উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ওরফে দিপু মিয়া (৪৩)। তাদের মধ্যে দিপু মিয়া পলাতক রয়েছেন।

মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৩ জুন বিকাল ৩টায় নিজ বাড়ি গুপ্তপাড়া থেকে গোয়ালাবাজারে যান প্রবাস ফেরত মাসুক মিয়া। বাজার থেকে ওইদিন তিনি আর ফিরে আসেননি। মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী যোগাযোগ করলেও রিং বাজে কেউ ফোন ধরেনি। পরে আবারো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ১৪ জুন ওসমানীনগরের দাসপাড়া গফুর মিয়ার বাড়ির পশ্চিম পাশে কবরস্থানের সামনে রাস্তা সংলগ্ন সাবু মিয়ার ধান ক্ষেত থেকে মাসুক মিয়ার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এরপর এলাকায় মাইকিংয়ের সংবাদে নিহতের সহোদর দণ্ডিত আসামি আলফু ও শেখ তোতা ঘটনাস্থলে গিয়ে মাসুক তাদের ভাই বলে লাশ সনাক্ত করে। পরবর্তীতে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আলফু মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা (নং-১৪ (৬)’১৮) দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার বর্তায় ওসমানীনগর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) এসএম মাঈন উদ্দিনের ওপর।

তদন্তকালে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহতের ভাই আলফু, পংকী ও তোতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। প্রবাস থেকে ভাইদের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন শেখ মাসুক মিয়া। কিন্তু ভাইয়েরা সেই টাকা দিয়ে তাদের নামে জমি কিনেছেন। দেশে ফিরে পাঠানো টাকায় কেনা জমি তার নামে লিখে দিতে দাবি করলে পরিকল্পিতভাবে দুই ভাবি ও ভাইয়েরা মিলে তাকে হত্যা করে।

পরে থানার এসআই মমিনুল বাদি হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএম মাঈন উদ্দিন। পরে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আমলি আদালতে সহোদরকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন আলফু, পংকি ও তোতা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, আসামি ফখর উদ্দিন, লাভলী বেগম, আনোয়ারা বেগম, শেখ হাজি আব্দুর রউফ লেবু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৬ জুলাই গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আসামি আনোয়ারা বেগমও একই আদালতে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিমতে, বর্ণিত মামলার বাদি আলফু মিয়াসহ অন্যান্যা আসামিরা মিলে মাসুক মিয়াকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধে খুন করে।

এই ঘটনায় ২০১৯ সালের ৮ মে আদালতে চার সহোদরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র (চার্জশীট নং-৫৭) প্রদান করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএম মাঈন উদ্দিন। মামলাটি অত্র আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করা হলে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় শোনানীকালে ২৯ সাক্ষির মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক আসামিদের সকলকে দোষী সাব্যস্থ করে ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলে অ্যাডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট এখলাছুর রহমান ও আল আসলাম মুমিন। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও পলাতকের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফারজানা হাবিব চৌধুরী।