হাত–পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর কিশোরীকে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

হাত–পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর কিশোরীকে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

Manual1 Ad Code

কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাতিরঝিল থেকে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মেয়েটি রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। মা–বাবার কাছে কেনাকাটার কথা বলে বাইরে বেরিয়েছিল সে। পরে আর বাসায় ফেরেনি। রোববার (২ ফেব্রুয়ারী) হাতিরঝিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই যুবক পুলিশকে জানিয়েছে, হাত–পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে হত্যা করে তাঁরা।

Manual8 Ad Code

ওই কিশোরী নিখোঁজ হয় গত ১৬ জানুয়ারি। পরে ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ তারিখে একটি মামলা করেন তিনি। এরপর কিশোরীটির মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে ৩০ জানুয়ারি রবিন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাব্বি মৃধা নামের আরও এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এরপর রবিন ও রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, পাঁচজন মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এতে তাঁর মৃত্যু হলে মরদেহ হাতিরঝিলে ফেলে দেওয়া হয়।

রাব্বি ও রবিনের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে হাতিরঝিল থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মেয়েটিকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে রবিন ও রাব্বি মৃধা। পরে রোববার সন্ধ্যায় তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরীর বাবা ও মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ওই কিশোরীর বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর দক্ষিণখানে। ১৬ জানুয়ারি বেলা দুইটার দিকে সে মা–বাবাকে বলেছিল, জরুরি কেনাকাটা করে দ্রুত বাসায় ফিরবে। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ফেরেনি।

কিশোরীটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে সেদিন দুপুরে বেরিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় ফেরেনি। তখন আমি আত্মীয়স্বজনসহ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু মেয়ের খোঁজ না পেয়ে তিন দিন পর দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করি।’

মেয়েটির বাবা আরও বলেন, ‘আমার যে মেয়েটি স্কুলে যেত, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করত, আজ সে মরদেহ হয়ে বাসায় ফিরেছে। যারা আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কিশোরীকে হত্যা করার পর মরদেহ বস্তাবন্দী করা হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি ঘটনার দিন মধ্যরাতেই মহাখালী থেকে রিকশায় করে মরদেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে আসে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) মো. নাসিম এ-গুলশান বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। পরে তাকে মহাখালীর একটা বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করে রবিনসহ পাঁচজন। ধর্ষণের সময় কিশোরীটির হাত-পা বাঁধা এবং মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর তিনজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা বলেন, ‘মেয়েটির বাবা থানায় জিডি করার পর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করি। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে মেয়েটির সন্ধান না পেয়ে তার মুঠোফোনের সিডিআর (ফোনকলের বিস্তারিত তথ্য) জোগাড় করি। সেখানে একটি সন্দেহজনক নম্বর পাই। সেটিই ছিল রবিনের মুঠোফোন নম্বর।’

রবিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হলো, সে বিষয়ে তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মো. নাসিম এ-গুলশান বলেন, রবিনের মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কিশোরীটির সঙ্গে ঘটনার দিনই (১৬ জানুয়ারি) তাঁর প্রথম কথা হয়েছিল। রবিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে মহাখালীর একটি বাসার সন্ধানও পাওয়া যায়। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাব্বিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রথমে দুজনের কেউই কিশোরীর বিষয়ে তথ্য দিচ্ছিল না। পরে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায়।

সহকারী কমিশনার নাসিম এ-গুলশান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিন স্বীকার করে, কিশোরীকে ‘ফাঁদে ফেলে’ সেদিন দুপুরে মহাখালীর একটি বাসায় নিয়ে যায় তাঁরা। এরপর তার হাত–পা বেঁধে ফেলে। মুখে গুঁজে দেয় কাপড়। তারপর পাঁচজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে কিশোরীটি অচেতন হয়ে পড়ে। পরে সে মারা গেলে মরদেহ গুম করার পরিকল্পনা করা হয়।

Manual6 Ad Code

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কিশোরীকে হত্যা করার পর মরদেহ বস্তাবন্দী করা হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি ঘটনার দিন মধ্যরাতেই মহাখালী থেকে রিকশায় করে মরদেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে আসে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। মরদেহটি সেতু থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দেয় রবিন। এরপর যে যার বাসায় চলে যায়।

Manual5 Ad Code

সহকারী কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) মো. নাসিম এ-গুলশান জানান, আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিন পেশায় একজন গাড়িচালক। রাব্বি মৃধারও নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অভিযুক্ত অন্য তিনজনও রবিনের পূর্বপরিচিত।


 

Manual1 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code