২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫
সিলেটের সবচেয়ে বড় হাওর বিল হাকালুকি, এ হাওর সিলেট, মৌলভীবাজার দুই জেলায় বেশির ভাগ অংশ রয়েছে। দুই জেলায় হাওর হওয়াতে বিলের এ প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চোখ জুড়ায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশ বিদেশী অতিথি পাখির আগমনেই মুখরিত হয়ে পড়ে। ওই পাখি গুলো শুধু হাকালুকি হাওর নয় সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার আশ পাশ ছোট ছোট হাওরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্ত হঠাৎ করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অতিথি পাখিরা কমতে শুরু করেছে। পাখি কমতেই পর্যটকদের সৌন্দর্য নজর কাড়ছে না।
শীত আসলেই অতিথি পাখিরা মুখরিত থাকে বিলে। নানা জাত-প্রজাতির রং- বেরঙের পাখির কলকাকলি, খুনসুটি, ওড়াউড়ি ও পানির ভেতর ডুব দেওয়া আর দলবেঁধে সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখে তৃপ্ত হন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এ বছর অন্যান্য বছরে মতো পাখির তেমন একটা দেখা রনই। কমেছে অতিথির পাখির সংখ্যা। এমন চিত্র মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কাবিল ও হাইল হাওরের বিলে।
২০০৩ সালে হাইল হাওরের প্রায় ১২০ একরের বাইক্কা বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণার শুরু থেকেই বাইক্কা বিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে আসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন’।
তাদের দেয়া তথ্যমতে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাখির সংখ্যা তেমন নেই। যার কারণ জলজ বন ও কচুরিপানা কমে যাওয়া। সেই সাথে বাইক্কা বিলের ভেতরে পাখি শিকার বন্ধ থাকলেও হাইল হাওরের বিশাল এলাকায় জনবল সংকটের কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না পাখি শিকার। বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে নতুন-নতুন পদ্ধতিতে পাখি শিখার করছে শিকারিরা।
অতিথি পাখিদের বড় একটি অংশ পানিফল, হেলেঞ্চা, বল্টুয়া, চাল্টিয়া ইত্যাদিসহ পদ্মপাতাকে ঘিরে বসবাস করে। এসব জলজ বন থেকে নানা ধরনের উদ্ভিদ এবং পোকা খেতে পছন্দ করে। গত বর্ষায় প্রচুর কচুরিপানা থাকায় পানির নিচে থাকা জলজ বন কচুরিপানার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে জলচর পাখিদের আনাগোনা কমেছে।
বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুস ছোবহান বলেন, বিলে লতাপাতা ঝোঁপজঙ্গল না থাকলে পাখি বিলে বসে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিলে পাখি সংখ্যা কম। মাঝে মধ্যে পাখি শিকারিদের উৎপাতের কারণে পাখিদের আরো সমস্যা হয়। ৩০০ হেক্টরের বাইক্কা বিলের আয়তন। ৬ জন প্রহরী দিয়ে বাইক্কাবিলে পাখি শিকার থেকে মুক্ত রাখতে হলে প্রচুর জনবল প্রয়োজন।
হাকালুকি ও বাইক্কা বিল ঘুরে দেখা যায়, পাখির আগমন ঘটলেও তা খুবই কম। বাইক্কা বিলের ওয়াচ টাওয়ারের সামনের অংশে অন্যান্য বছর জলজ বনে যে ভাবে পাখির উপস্থিতি দেখা মিলত, এ বছর তা নেই। ওয়াচ টাওয়ারের বামপাশের কিছু অংশ ছাড়া বিশাল অংশ জলজ বন শূন্য। জলজ বন কমে গেছে।
হাকালুকি ও বাইক্কা বিলে পাখির ছবি তুলতে এসেছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজাম। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ মৌসুমে পাখির ছবি তুলতে আমি হাকালুকি ও বাইক্কা বিল আসি। এ বছর পাখির উপস্থিতি অন্যান্য বছর থেকে কম। ধলাবক, ধূসর বক, তিলা লালপা, ছোট ডুবুরি, রাজ সরালি, সরালি, বালিহাঁস, পাতি তিলি হাঁস, মরচে রং ভুতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, পিয়ং হাঁস, গয়ার বা সাপপাখি, পাতি কূট, পাতি পানমুরগি, বেগুনি-কালেম, পানকৌড়ি, কানিবক, ডাহুক, বিল বাটান, গেওয়ালা বাটান, কালাপাখ ঠেঙি, লাল লতিকা টিটি, মেটেমাথা-টিটি ইত্যাদি।
অভিযোগ রয়েছে, হাকালুকি ও বাইক্কা বিল এবং হাইল হাওরে রাতের বেলা পাখি শিকার করে। পরে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট হাতে এবং বাসা-বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় এসব পাখি।
শ্রীমঙ্গল পাখি শিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৃতি ও বন্য প্রাণি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘পাখি যেন শিকার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক করেছি। মাঝে মধ্যে হাওর এলাকায় টহল দিয়ে আসি। তিনি আরো বলেন, সাধারণ জনগণ সচেতন হলে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমাদের জন্য ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহ্বায়ক আ স ম সালেহ সুহেল বলেন, অতিথি পাখি আর বাইক্কা বিলকে নিরাপদ ভাবছে না। সেই সাথে নিয়ম না মেনে বাইক্কা বিলের আশেপাশে তৈরি করা হচ্ছে ফিশারি। যার কারণে উদ্ভিদ ও জলজ বৈচিত্র্য নেই। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে স্থানটিকে নিরাপদ রাখতে পারলে সারা বছর এখানে পাখি থাকবে। জলজ উদ্ভিদের ভেতর লুকিয়ে থেকে পরিযায়ী পাখিরা নিজেকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং খাবার সংগ্রহ করে। জলজ বনে জলময়ূরসহ অনেক প্রজাতির পাখি ডিম পাড়ে। তাই জলজ বন না থাকলে পাখি আসবে না। এগুলোর দিকে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
বাইক্কা বিল দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বলেন, কয়েক দিন আগে পাখির আনাগোনা খুব বেশি ছিলো। বাইক্কা বিলের কচুরিপানা বিল থেকে সরে যাওয়ায় পুরো বিল প্রায় ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। পাখিরা এসব কচুরিপানা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের ওপরেই বেশি ভাগই থাকে। বিলের কিছু অংশে শাপলা-পদ্ম টিকে থাকলেও জলজ উদ্ভিদ প্রায় নেই। এতে পাখির আনাগোনা কমেছে। তিনি আরো বলেন, বাইক্কাবিলে পর্যটকের সংখ্যা বেশি থাকায় পাখিরা একটু দূরে থাকে। অনেক পর্যটকই পাখিদের বিরক্ত করেন। হাওরে বাঁধ দিয়ে মেশিন লাগিয়ে পানি সেচা হয়। কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখা হয় পাখিদের ধরার জন্য। তাছাড়া বাইক্কা বিলে নৌকা নিয়ে প্রায়ই চলাচল করতে দেখা যায়, যা পাখির জন্য এসব খুবই ভয়ানক বিষয়। পাখি শিকারের বিষয়টি জানতে চাইলে মিন্নত আলী বলেন, স্থানীয় কিছু মানুষ শিকারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে আমাদের পাঁচজন লোক বিলের পাহারায় থাকে। আগেও শিকারির উৎপাত ছিল। এখন সেটা নেই। তবে অনেক সময় বিলে আশ-পাশে জাল বিছিয়ে রাখলে সেটা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেই। পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে পাখি শুমারী হবে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাকালুকি ও বাইক্কা বিলে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করে। পাখিরা মার্চ পর্যন্ত থাকে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে বিলের আকাশে ওড়াউড়ি করে, শাপলা-পদ্মপাতায় বিশ্রাম নেয় এবং জলে ডোবে-ভাসে। এই বিলে বালিহাঁস, খয়রা কাস্তে চরা, তিলা লালপা, গেওয়ালা বাটান, পিয়াং হাঁস, পাতি তিলা হাঁস, নীল মাথা হাঁস, উত্তরে লেঞ্জা হাঁস, গিরিয়া হাঁস, উত্তুরে খস্তিহাঁস, মরচে রং ভুতিহাঁস, মেটে মাথা টিটি, কালা লেজ জৌরালি, বিল বাটান, পাতিসবুজলা, বন বাটান, পাতিচ্যাগা, ছোট ডুবংরি, বড় পানকৌড়ি, ছোট পানকৌড়ি, গয়ার, বাংলা শকুন, এশীয় শামুকখোল, পান মুরগি, পাতিকুট, নিউপিপি, দলপিপি, কালাপাখ ঠেঙ্গি, উদয়ী বাবু বাটান, ছোট নথ জিরিয়া, রাজহাঁস, ওটা, ধুপনি বক, ইগল, ভুবন চিল, হলদে বক, দেশি কানিবক, গো-বক, ছোট বক, মাঝেলা বগা, লালচে বক, বেগুনি কালেম, বড় বগা, দেশি মেটে হাঁস, সরালি, বালিহাঁস, পানমুরগির, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, চড়-ই, বুলবুলি, দাগি ঘাসপাখি, টুনটুনি, ফিঙেসহ নানা প্রজাতির পাখি দেখা যেত। এখন বক, বালিহাঁস, ডুবরি, পানকৌড়ি, কালেম ছাড়া বেশি পাখি চোখে পড়ে না। স্থানীয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাখি দেখতে আসা পর্যটকেরাও এখানে এসে হতাশ হন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D