মার্চেন্ট ক্লাব থেকে হোয়াইট মোহামেডান

প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২৫

মার্চেন্ট ক্লাব থেকে হোয়াইট মোহামেডান

রাশেদুর রহমান : ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজের শেষ সময়। চারদিকে উৎকণ্ঠা। দেশ ভাগ নিয়ে আলোচনা জোরদার হচ্ছে। এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আমাদের পূর্বসূরিরা ভাবছিলেন যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
সুন্দর এক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সিলেটে ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বেশ কয়েকটি নতুন ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয়। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। পূর্বসূরিদের নেওয়া সেই মহতী উদ্যোগ আজকালের গর্ভে অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
ধুলোর আস্তরণে মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সোনালি এক ইতিহাসের। তবে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো টিকে আছে হোয়াইট মোহামেডান।সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে নবীন-প্রবীণ অনেকের সঙ্গে আলাপ করে নানা রকম তথ্য পাওয়া গেল। সেগুলো জোড়াতালি দিয়ে অতীতের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস উদ্ধার করা সহজ কথা নয়।
১৯৪০-এর দশকে বিখ্যাত ব্যবসায়ী ধনুলাল আগরওয়াল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মার্চেন্ট ক্লাব। সে সময় সিলেট শহরে আরও কয়েকটি ক্লাব ছিল। সেগুলোর মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বিমলেন্দু দাস সাধু বাবু ও তার পরিবার। এই পরিবারের হাত দিয়েই তৈরি হয়েছিল সিলেটের ঐতিহাসিক টাউন ক্লাব। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিবারটির বর্তমান কর্ণধার ডা. বনদীপলাল দাস।
১৯৪৫/৪৬ সালে সাধু বাবুর পরিবারের উদ্যোগেই মাঠে গড়ায় বঙ্কু বিহারি শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টে মার্চেন্ট ক্লাব, টাউন ক্লাব, পুলিশ এসি, আলিয়া মাদ্রাসা এবং ইসমাইল স্পোর্টিং ক্লাবের অংশগ্রহণের কথা জানা যায়। এই টুর্নামেন্টটা প্রায় এক যুগ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেটে। বঙ্কু বিহারি শিল্ড টুর্নামেন্ট খেলে খ্যাতি অর্জন করা মার্চেন্ট ক্লাব ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র ৫০ রুপিতে কিনে নেন কমরউদ্দিন ঝাড়ো। সিলেটে তিনি ‘ঝাড়ো ভাই’ নামেই বেশি খ্যাত। মার্চেন্ট ক্লাবেরই নাম বদলে হোয়াইট মোহামেডান করেন কমরউদ্দিন। অন্য অনেক পুরনো ক্লাবের মতো এ ক্লাবটা হারিয়ে যায়নি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে।
হোয়াইট মোহামেডানের বর্তমান সভাপতি ডা. আরিফ আহমেদ মমতাজ রিফা। সাবেক ফুটবলার ও রেফারি সমর চৌধুরীও কাজ করছেন তার সঙ্গে। এ দুজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেল নানা তথ্য। হোয়াইট মোহামেডানের পর ব্লু মোহামেডান এবং গ্রিন মোহামেডান নামে আরও দুটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কমরউদ্দিন। সেগুলোর কার্যক্রম এখন নেই বললেই চলে। তবে হোয়াইট মোহামেডানকে টেনে নিয়ে ছুটছেন ডা. রিফা। ক্লাবটি ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল ইত্যাদি খেলায় অংশগ্রহণ করে। ক্রিকেটে ২০১০ সালের পর থেকে তিনবার দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হোয়াইট মোহামেডান (২০১০-১১, ২০১৬-১৭ ও ২০২৩-২৪)। উঠেছে প্রথম বিভাগে। তবে প্রথম বিভাগে টিকে থাকতে পারেনি নানা কারণে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় একই মালিকানায় একাধিক ক্লাব থাকায় দেখা দেয় সংকট। সিলেটের পরিস্থিতিও ভিন্নতর নয়। একাধিক ক্লাব থাকার সুবিধা ভোগ করেন একটা শ্রেণি। আর কষ্ট করে চলতে থাকা ক্লাবগুলো এর শিকার হয়। নানা প্রতিকূলতার পাশাপাশি ফেডারেশন এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা না পেলেও গাঁটের টাকা খরচ করে চলছে হোয়াইট মোহামেডান। প্রায় আট দশকের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এখনো।


তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন


এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট