শেখ হাসিনা পালালেও সামনে আরেকটি বড় যুদ্ধ

প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

শেখ হাসিনা পালালেও সামনে আরেকটি বড় যুদ্ধ

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়নে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও এখন নেতাকর্মী ও দেশবাসীর সামনে আরেকটি বড় যুদ্ধ রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান।

তিনি বলেছেন, কী সেই যুদ্ধ? বিগত ১৬ বছর যাবত এ দেশের মানুষ, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা মানুষের রাজনৈতিক অধিকার এবং বাক-স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা-সমর্থন নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেছে। মানুষের সেই অধিকারগুলোকে এখন পর্যায়ক্রমে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদকে হটাতে গোলাম রাব্বানিসহ যারা শহীদ হয়েছে, জীবন দিয়েছে- এটাই ছিল তাদের প্রথম লক্ষ্য।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারীর লক্ষীচাপ দূবাছুরি মাদ্রাসা মাঠে ২০১৪ সালে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রাব্বানির পরিবারের জন্য নবনির্মিত বাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী-সন্তানের হাতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সৌজন্যে নির্মিত বাড়ির চাবি তুলে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ সময় জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে শহীদ হওয়া নীলফামারী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের ১২ পরিবারের সদস্যদের হাতে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকার চেক তুলে দেন বিএনপি নেতারা।

ক্ষমতাচ্যুৎ আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, আমাদের ভাই গোলাম রব্বানি। তার সঙ্গে কী হয়েছে, কীভাবে এই মানুষটিকে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে তার পরিবার নির্যাতিত হয়েছে- এসব কিছুই আপনারা জানেন। কারণ, আপনারা এ এলাকারই মানুষ। গোলাম রব্বানি শুধু একজন নয়, গত ১৬ বছরে সমগ্র বাংলাদেশে এ রকম হাজারো গোলাম রব্বানিকে হত্যা করেছে এবং লাখ লাখ পরিবারকে নির্যাতন করেছে পালিয়ে যাবার ক’দিন আগেও, এক সপ্তাহ আগেও সেই পলাতক স্বৈরাচার। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রায় ২০ হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে, প্রায় ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে বিভিন্নভাবে জখম-নির্যাতন করেছে।

তিনি বলেন, গোলাম রব্বানি একজন সাধারণ মানুষ ছিল, একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল। তার দোষ ছিল- সে দেশের মানুষের অধিকার, কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিল- স্বৈরাচার যে অধিকারকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল। গোলাম রব্বানি সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল; সে মানুষের পক্ষে, মানুষের অধিকারের পক্ষে, মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে কথা বলেছিল। সে কারণেই স্বৈরাচারের দোসররা তাকে হত্যা করেছে। এ রকম বহু হত্যা করেছে। গোলাম রব্বানিসহ আমাদের ভাইয়েরা আরও যারা শহীদ হয়েছে, তাদের আমরা হয়তো ফিরিয়ে আনতে পারব না। কিন্তু যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বিভিন্নভাবে পঙ্গুত্ববরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা হয়তো তাদের কাউকে কাউকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করতে পারব; আবার কাউকে কাউকে হয়তো কিছুটা হলেও সুস্থ করতে পারব। যে পরিবারগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- আপনারাসহ বাংলাদেশের মানুষেরা যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যদি সেই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়, তাহলে ওই পরিবারগুলো আগামী যে কয়দিন বেঁচে থাকবে, কিছুটা হলেও ভালো থাকবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ সময় এসেছে, পরিবর্তিত হয়েছে অবস্থা। স্বৈরাচার এই দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে পালিয়ে গেছে। যদিও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা, অনেক সহযোগীরা এখনো সেই দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে। তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে। আমরা-আপনারা যারা আজ এখানে একত্রিত হয়েছি, আপনাদের মতো এ রকম কোটি কোটি মানুষ যারা বাংলাদেশকে একটি স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে দেখতে চায়; যেখানে একজন বেকার যুবক শিক্ষিত হোক, অল্পশিক্ষিত হোক কিংবা অর্ধশিক্ষিত হোক- তার কর্মসংস্থানের জন্য বেশি বেগ পেতে হবে না। যেখানে শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার জন্য টেনশনে থাকতে হবে না, যেখানে রাতের বেলা এবং দিনের বেলায়ও মানুষ পথ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় কম-বেশি নিশ্চিন্তে-নিরাপদে হেঁটে যেতে পারে, এটি স্বাভাবিক। একজন মানুষ, সাধারণ মানুষ নিজের দেশ সম্পর্কে যা চিন্তা করে, যা কল্পনা করে- সে রকম একটি দেশ আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।

‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানির মেয়ে রহমত জাহান রিক্তাসহ স্থানীয় নেতারা।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট