১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৪
সিলেটের কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক নারীসহ আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে সিলেট জেলা পুলিশ।
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল।
আটকরা হলেন- ইসলাম উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন ও নাজমা বেগম। এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে এই ঘটনায় ৩ নারীকে আটক করা হয়। তারা হলেন- নিহত শিশু মুনতাহার প্রতিবেশী ও গৃহশিক্ষক শামিমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও নানী কুতুবজান বিবি।
প্রসঙ্গত, মুনতাহা কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল গ্রামের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে শিশু মুনতাহা। দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পায়নি। মুনতাহার নিখোঁজের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় হয়। তার সন্ধান চেয়ে দেশ-বিদেশে অনেকে পুরষ্কারও ঘোষণা করেন।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভোররাতে মুনতাহার বাড়ির পাশের একটি খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা মুনতাহার গৃহশিক্ষক শামিমা বেগম মার্জিয়াকে ধরে নিয়ে আসি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিলো। তখন হাউস টিউটরের বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য রাতেই আমরা মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের বলি।
তিনি বলেন, রোববার ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদের পাশের পুকুরে ফেলে দেন ওই গৃহশিক্ষকের মা আলিফজান বিবি। সাথেসাথে স্থানীয়রা আলিফজান বিবিকে আটক করে আমাদের খবর দেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং মার্জিয়ার মা ও নানিকে ধরে নিয়ে আসি।
মরদেহের গলায় রশি পেঁচানো ছিল ও শরীরে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে গৃহশিক্ষক ও তার মা মুনতাহাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। পূর্ব বিরোধের কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে।
মুনতাহা চাচা কয়সর আহমেদ জানান, মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিক মার্জিয়া পুর্ব শত্রুতার জেরে অপহরণ করে তাকে হত্যা করে। পরে, বাড়ির পাশে ডোবায় কাঁদার নিচে পুঁতে রাখে। রোববার ভোরের দিকে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবি সেই লাশ সরিয়ে নিতে গেলে জনতার হাতে আটক হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো রফিকুল ইসলাম জানান, মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ডোবায় ফেলে রাখা হয়। মার্জিয়াকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই মার্জিয়ার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। আর দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, মুনতাহার নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্ঠা করছিল। কিন্তু কোনো ক্ল্যু পাচ্ছিল না। শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে করে। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশেপাশে মাটি খোড়া আছে কী না খোঁজ নিতে বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশের তথ্যমতে মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা শনিবার রাতভর মাটিখোড়া কোনো জায়গা আছে কী না খুঁজতে থাকেন। রোববার ভোররাতে ফজরের আজানের আগ মুহুর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখে আটকানোর চেষ্টা করেন। এসময় সে দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান।
আটকের পর সে জানিয়েছে, মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিল। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিল।
আফসার উদ্দিন বলেন, মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশি ছিল। একসময় ভিক্ষা করে মার্জিয়ার মা ও নানি। একসময় মুনতাহাকে বাড়িতে পড়াতো মার্জিয়া। মার্জিয়া স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ায় বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতো। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D