বাজেট অধিবেশনের সমাপনী আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ

প্রকাশিত: ৪:২০ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০

বাজেট অধিবেশনের সমাপনী আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনের সমাপনী আলোচনায় অংশ গ্রহন করে ভাষণ দান করেন। নিচে তাঁর ভাষণের পূর্ণবিবরণ প্রদান করা হলো।

মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আলোচনা

সমাপনী বক্তব্য
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সোমবার
১৫ আষাঢ় ১৪২৭
২৯ জুন ২০২০

মাননীয় স্পীকার
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে শহিদ আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে।
শ্রদ্ধা জানাই জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতিতা ২ লাখ মা-বোনকে।
সদ্য প্রয়াত অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও বর্ষীয়ান জননেতা জনাব মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আবদুল্লাহ-সহ কোভিড-১৯-এ প্রাণ হারানো সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সমবেদ জানাচ্ছি তাঁদের পরিবারের প্রতি।
আর যাঁরা এখনও আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
চলতি ২০২০ সালে উদযাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী বছর ২০২১ সালে জাতি পালন করতে যাচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। কিন্তু এই মাহেন্দ্রক্ষণে গোটা বিশ্ব এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব অথর্নীতি আজ মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে মর্মে প্রাক্কলন করেছে। তাছাড়া, করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ১৩-২০ শতাংশ হ্রাস, বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লক্ষ কর্মীর পূর্ণকালীন চাকুরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫-১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিটেন্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে মর্মে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ এবং ভাইরাসের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৬ মার্চ হতে ৩০ মে পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি কার্যকর ছিল। গণপরিবহন এবং কল-কারখানা এ সময়ে বন্ধ থাকে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি মন্থর হয়।
এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সব বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫.২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
আশা করা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২১ অথর্বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮.২ শতাংশ।
একই সাথে নিম্ন মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

অনেকে বলছেন, বাজেট একটু বেশি আশাবাদি, বা উচ্চাভিলাষী। একটা কথা মনে রাখতে হবে সবসময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। আজকে কোভিড-১৯ এর জন্য সবকিছু স্থবির। তবে, আমরা আশাবাদী যে, এ অবস্থা থাকবে না। এর থেকে উত্তোরণ ঘটবে। আজকে যদি হঠাৎ সে অবস্থার উত্তোরণ ঘটে যায় তাহলে আগামিতে আমরা কি করবো, সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপটা আমরা নিয়েছি। সেখানে কোভিড যদি শেষ না হয় তাহলে হয়তো আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো না কিন্তু আমাদের প্রস্তুতিটা থাকা দরকার বলে আমরা মনেকরি এবং সেজন্য উচ্চাভিলাসি বাজেটই আমরা দিয়েছি।

প্রবৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে অনুমানসমূহ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তা হলো:
(ক) করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের অর্থনীতির উৎপাদন ব্যাহত হলেও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কোন ক্ষতি হয়নি, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধ-বিগ্রহের সময় হয়ে থাকে;
(খ) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কর্মসৃজন ও ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে এবং প্রণোদনার প্যাকেজসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারি পূর্বাবস্থায় চলে আসবে;
(গ) অক্টোবর/নভেম্বর মাসের মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক টিকা বাজারে চলে আসলে ইউরোপ-আমেরিকায় জীবনযাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং আমাদের রপ্তানি আয় কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসবে;
(ঘ) বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ধীরে ধীওে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাস আয়ে বর্তমান সঙ্কট কেটে যাবে।


এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট