৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৫
অবৈধ পথে গত দুই বছরে ইতালি যেতে গিয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ২৬৫ জন তরুণ। তাদের প্রত্যেকে কেউ ভিটেমাটি বিক্রি করে, কেউবা সুদে টাকা এনে ১৮ থেকে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন দেশি ও লিবিয়ার দালাল চক্রকে। তার পরও স্বপ্নের ইতালিতে পৌঁছাতে পারেননি তারা। বরং নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং সহায়-সম্বল হারিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাদের।
তেমনই একজন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে শাকিল আহমদ। ভালো কাজের আশায় ইতালি যাওয়ার লোভে তিনি দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। শাকিল জানান, ২০২৩ সালের মে মাসে দালালের মাধ্যমে কয়েকটি দেশ পেরিয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর চুক্তি করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সাড়ে চার লাখ টাকায় চুক্তি হয়। টাকা পরিশোধের পর প্রথমে দুবাই যান। সেখানে এক মাস থেকে অবৈধভাবে মিসরে প্রবেশ করেন এবং পরদিন লিবিয়ায় পৌঁছান। লিবিয়ায় পৌঁছে শরীয়তপুরের এক দালালের সঙ্গে আবার নতুন করে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। দালাল তাঁকে আশ্বাস দেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। টাকা পরিশোধের পর ৪৮ জনের একটি দলের সঙ্গে শাকিলকেও অপেক্ষায় রাখা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর সেই দালাল তাদের লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
শাকিল আরও জানান, লিবিয়ার একটি দালালচক্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে তাদের কয়েকজনকে ফের কিনে নেয়। এরপর শুরু হয় মুক্তিপণের জন্য নির্মম নির্যাতন। শাকিলসহ অনেকে এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন দেশে ফেরেন, ততদিনে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আর দালাল চক্রকে মুক্তিপণ দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় তাদের পরিবার।
শাকিল বলেন, টাকা ধার নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, কষ্ট করে উপার্জন করে ঋণ শোধ করব। কিন্তু এখন সবকিছু হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।
শাকিলের মতোই আরেকজন সদর উপজেলার ভাটি সাফেলা গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া আহমেদ ইয়াহিয়া। তিনি জানান, দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ থেকে দুবাই, মিসরসহ আরও একটি দেশ হয়ে লিবিয়া যেতে তাঁকে দিতে হয়েছিল চার লাখ টাকা। লিবিয়ায় পৌঁছে আরও চার লাখ টাকায় চুক্তি করেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য। জাকারিয়া বলেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার বিষয়টিকে দালালরা বলে ‘গেম’। এই গেমের অপেক্ষায় আমাকে থাকতে হয়েছে ৮ থেকে ৯ মাস। পরে দালাল আমাদের ১২০ জনকে একটি নৌকায় তুলে দেয়। কিন্তু সাগরের মাঝপথে লিবিয়ার কোস্টগার্ড আমাদের আটক করে। পরে পাঁচ দিন কারাভোগের পর কুমিল্লার মাফিয়া রাসেল নামে এক ব্যক্তি আমাকেসহ আরও এক বাংলাদেশিকে কিনে নেয়। তাঁর বাড়িতে আরও অনেক মানুষ আটক ছিল। সবাইকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন।
জাকারিয়া বলেন, আমাকে বলা হয় দুই দিনের মধ্যে বাড়ি থেকে ৬ লাখ আনতে হবে। আমি বাড়ির জমি বিক্রি করে টাকা পাঠাতে বলি। পরিবার দুদিনের মধ্যে টাকা পাঠানোয় আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফিরেছি। এখনও ধারদেনা পরিশোধ করতে পারিনি।
ব্র্যাক মাইগ্রেশনের প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা জানান, অনিরাপদভাবে ইউরোপে যাওয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ বৈধভাবে বিদেশ গিয়েছেন। সে হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় বিদেশ যাচ্ছেন ১১৫ জন। এদের বড় অংশই অদক্ষ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল বলেন, জেলা প্রশাসনের প্রবাসী কল্যাণ সেল আছে। দূতাবাসের নির্দেশনা পেলে প্রবাসী কল্যাণ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তারা কাজ করে। তবে অবৈধভাবে যারা প্রবাসে যান, তাদের বিষয়ে এই সেল কোনো কাজ করছে না।
ব্র্যাকের এমআরএসসি কোঅর্ডিনেটর নজরুল ইসলাম বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকে বিদেশ পাড়ি দেন। সুনামগঞ্জে ২৬৫ জন তরুণ দালালের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে লিবিয়া থেকে ফেরত এসেছেন। যারা ফেরত এসেছেন, তাদের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। অনেকেই লিবিয়া থেকে গেমে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যান। তাদের তথ্য নেই আমাদের কাছে। তরুণরা যেন অবৈধভাবে বিদেশ পাড়ি না জমান, সেজন্য আমরা সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি।
সূত্র : সমকাল

EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D