৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫
আজ ৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৯৬ সালের এই দিনেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। তার রহস্যজনক ও হঠাৎ মৃত্যুর খবর যেন পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। আজ তার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমান শাহ কোটি কোটি বাঙালির মনে আজও ভালোবাসায়, শোকে ও ভক্তিতে রয়ে গেছেন।
সালমান শাহ- এর প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, সিলেটে। এই নায়ক মাত্র চার বছর সময়ের মধ্যে (১৯৯৩-১৯৯৬) ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এক অনন্য ইতিহাস গড়েছিলেন। বলা হয়, বাংলা সিনেমায় নতুন একটি অধ্যায় শুরু হয়েছিলো তার আগমনে।
নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতুর নাম সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করে নিমিষেই খসে পড়েন চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে।
১৯৯৩ সালে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায়। প্রয়াত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত সিনেমাটি দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্কার করল এক নবাগত নায়কের অসাধারণ অভিনয় শৈলী। এমনি করে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা প্রেক্ষাগৃহ মুখী হলেন, পরিচালকরা হলেন আস্বস্ত। এমনি করে সুদিন ফিরে আসে বাংলার চলচ্চিত্রে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অচেনা অজানা সালমানকে। বাংলা চলচ্চিত্রের ত্রাতা হয়ে একে একে উপহার দিলেন দুর্দান্ত ২৭টি সিনেমা।
অভিনয়ের জাদু দেখালেন, সবার মন জয় করলেন আবার কাউকে কিছু না-বলে একবুক চাপা অভিমান নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে বিস্মিত করে না ফেরার দেশে চলে যান নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর এত বছর পরও দর্শক হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন ঢালিউডের হার্টথ্রব নায়ক সালমান শাহ।
ঢাকাই সিনেমার ক্ষনজন্মা এই সুপারস্টারের মৃত্যু আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ছিল শুক্রবার। সেদিন সকালে সন্তানের অসুস্থতার খবর পেয়ে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে যান তাঁর মা নীলা চৌধুরী। গিয়ে দেখতে পান, সালমানের স্ত্রী সামিরার এক আত্মীয়ের পার্লারের কয়েকজন মেয়ে অভিনেতার হাতে-পায়ে সরিষার তেল দিচ্ছেন। এসময় পরিবারের সদস্য ও গৃহকর্মীরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রথমে হলি ফ্যামিলি এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলেও চিকিৎসক জানান, সালমান শাহ আর নেই। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভক্তদের ঢল নামে হাসপাতাল ও নিউ ইস্কাটন রোডের বাসার সামনে। শোকের ছায়া নেমে আসে শোবিজ অঙ্গনে।
এই সুপরস্টারের মৃত্যুর পরপরই শুরু হয় জল্পনা। পুলিশ প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করে। কিন্তু সালমান শাহর মায়ের দাবি ছিল, এটি কোনোভাবেই আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ফলে অপমৃত্যুর মামলা রূপ নেয় হত্যা মামলায়।
পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে একে একে কাজ করে ডিবি, সিআইডি, র্যাব এবং সর্বশেষ পিবিআই। সিআইডির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এটি আত্মহত্যা। কিন্তু পরিবারের আপত্তি অব্যাহত থাকায় মামলার জট খুলতে পারেনি কেউ।
২০২০ সালে পিবিআই চূড়ান্তভাবে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে জানায় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন। তাদের তদন্ত অনুযায়ী, দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন, স্ত্রীর সঙ্গে অমিল, প্রযোজকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি এবং আবেগপ্রবণ স্বভাব এসব কারণে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ অভিনেতার মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত্যর আগে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
তবে অভিনেতার এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তার ভক্ত-অনুরাগী ও পরিবার। ফলে মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরও সালমান শাহর বিদায় নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি।
৯০ দশকের গোড়ার দিকে একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। প্রায় চার বছরের অভিনয় জীবনে ২৭টি সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘জীবন সংসার’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’। সালমান শাহ-শাবনূর সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি। শাবনূর ছাড়াও সালমান শাহ স্ক্রিন শেয়ার করেছেন মৌসুমী, শাবনাজ, রোজিনার মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে।
সালমান শাহ মৃত্যুর রহস্যের জট আজও খুলেনি। এখনো সালমানের পরিবার, সহকর্মী ও ভক্তরা প্রিয় নায়কের মৃত্যুর আসল কারণ জানার জন্য ব্যাকুল। গতানুগতিক সিনেমা ও নায়কের ভিড়ে তরুণ সালমান নতুন দুয়ার খুলে দেন দর্শকদের জন্য। যে কারণে আজও স্মৃতির আয়নায় সালমান শাহ। স্মৃতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে ধূসর হয়ে গেলেও, বেঁচে আছেন দর্শকদের অন্তরে।
অকালে চলে যাওয়া দেশের চলচ্চিত্রের অগ্রযাত্রায় এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করে। আজও ইউটিউবে তার সিনেমা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ দেখেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার নাম, তার স্টাইল, তার অভিনয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আজ তার চলে যাওয়ার দিন। এই দিনে আমরা সালমান শাহ-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D