২৮শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২৫
মো. মামুন অর রশিদ: বর্তমান সময়ে মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে ডাক বিভাগের সেই পোস্টকার্ড লেখার দিনগুলোর কথা। হারিয়ে যাওয়া সেই চিঠিপত্রের স্মৃতিকে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে পোস্টকার্ড ‘নোটস্ অন জুলাই’। এটি কেবল একটি পোস্টকার্ড নয়—জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকে সংরক্ষণের এক সৃজনশীল ও অর্থবহ প্রয়াস। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এই সময়োপযোগী প্রয়াসের মাধ্যমে পোস্টকার্ডের হাত ধরে ফিরে আসছে অতীতের এক গৌরবময় অধ্যায়। ‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ডের মাধ্যমে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এক লাখ মানুষের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিকথা সংগ্রহের কার্যক্রম, যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এই উদ্যোগ শুধু অতীতকে সংরক্ষণ করে না, বরং নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ইতিহাসের এক সেতুবন্ধও গড়ে তোলে।
‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ডের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩ দশমিক ৫ ইঞ্চি। এই পোস্টকার্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক স্মৃতিকথা ও অভিজ্ঞতা লেখার জায়গা রয়েছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পোস্টকার্ডে গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক স্মৃতিকথা ও অভিজ্ঞতা লিখতে পারবেন। গত ১৩ই জুলাই পোস্টকার্ড ‘নোটস্ অন জুলাই’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম।
‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ডের মাধ্যমে এক লাখ মানুষের গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক স্মৃতিকথা সংগ্রহের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা তথ্য অফিসসমূহে এসব পোস্টকার্ড প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিসসমূহ সংশ্লিষ্ট জেলাপ্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘নোটস্ অন জুলাই’ পোস্টকার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক স্মৃতিকথা ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করছে। পোস্টকার্ডে স্মৃতিকথা লিখনে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও পোস্টকার্ডে লিখেছেন নিজেদের গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক স্মৃতিকথা ও অভিজ্ঞতা। কয়েকটি পোস্টকার্ডে লেখা স্মৃতিকথা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো :
শেরপুর জেলার শিক্ষার্থী ‘বর্ষা’ লিখেছেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে হাজারো শিক্ষার্থীর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শিখেছি। আমি ৭১ দেখিনি, ২৪ দেখেছি।’’ কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থী ‘শশী’ লিখেছেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমার জীবনের একটা অবিস্মরণীয় ঘটনা, যা আমাকে নতুন করে দেশকে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে।’’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণঅভ্যুত্থানকে সফল করেছেন। পোস্টকার্ডে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন রাকিবা লিখেছেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হলেও শেষ হয়েছে ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে, কিন্তু দিতে হয়েছে অজস্র প্রাণ। শহিদ আবু সাঈদের মতো মহান ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি গর্বিত।’’ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার সনি লিখেছেন, ‘‘১৬ই জুলাই, বিকেল ৩টা। আমার বন্ধু সাব্বির ও সাইফসহ আরও অনেক ছোট-বড় ভাইবোন, যারা আহত হয়েছিল, তাদের দেখার জন্য মেডিক্যাল যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে দেখতে পাই, আমার ভার্সিটির কিছু ভাইবোন আবু সাঈদের মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে। ওই মুহূর্ত কোনোদিন ভুলবো না।’’ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা লিখেছেন, ‘‘স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছিল, ভবিষ্যতেও এমন প্রতিবাদ করবো।’’
পোস্টকার্ডে সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ লিখেছেন, ‘‘জুলাই আন্দোলন, ২০২৪-এর সহিংস ঘটনার চিত্র ও বিভিন্ন ডকুমেন্টারি দেখলে মানসিকভাবে কষ্ট পাই। এ চিত্রগুলো গাজার যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলি থেকে কোনো অংশে কম নয়।’’ একজন পুলিশ সুপার লিখেছেন, একটা বিরাট মিথ্যার জগদ্দল পাথরকে, একটা কালো মেঘকে সরানোর জন্য সমগ্র জাতির একাত্মতা দেখেছি।’’ জুলাইযোদ্ধা মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘আমি ২০শে জুলাই ঢাকার বাড্ডায় বিজিবির গুলিতে আহত হই। এখন আমি অসুস্থ। আমি পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। আমি একটি সুন্দর বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশে কোনোপ্রকার বৈষম্য যেন না থাকে।’’ একজন আইনজীবী লিখেছেন, ‘‘একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন দেশ ও জাতি গঠনের প্রত্যয় নিয়ে পুত্র-কন্যাসহ জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি।’’
এসব পোস্টকার্ড কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নয়, বরং তা একটি জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধের দলিল, যেখানে নাগরিকের কণ্ঠস্বর নীরব কাগজে শব্দ হয়ে উচ্চারিত হয়েছে। এভাবে লাখো পোস্টকার্ডে উঠে আসবে লাখো মানুষের গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক স্মৃতি, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশার কথা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এসব পোস্টকার্ড গুরুত্বসহকারে সংরক্ষণ করবে। সংরক্ষিত প্রত্যেকটি পোস্টকার্ড ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে, যা আগামী প্রজন্মকে জানাবে—কীভাবে একটি জাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি কেবল অতীত নয়—এটি হয়ে উঠেছে ইতিহাসে রূপ নেওয়া এক জীবন্ত গল্প; যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি শ্লোগান এবং প্রতিটি প্রতিরোধ যেন একেকটি পঙ্ক্তির মতো। এই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণ কেবল একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় নয়, এটি দায়িত্ব, এটি চেতনার উত্তরাধিকার। স্মৃতি সংরক্ষণে ‘নোটস্ অন জুলাই’ নিছক কোনো উদ্যোগ নয়, এটি হয়ে উঠেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতির খাম। এই উদ্যোগ আমাদের প্রমাণ করে দেয়, কাগজের ছোট্ট আয়তক্ষেত্র হতে পারে সময়ের শ্রেষ্ঠ নথি—যা ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখে এবং নতুন ইতিহাস সৃষ্টির সাহস জোগায়। (পিআইডি ফিচার)
লেখক : বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সদস্য এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D