পাথর মেরে মানুষ হত্যায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার পদত্যাগ

প্রকাশিত: ৩:০৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২৫

পাথর মেরে মানুষ হত্যায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার পদত্যাগ

রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল কম্পাউন্ডে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগী এই নেতার নাম ড. ফয়জুল হক। তিনি ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর- কাঁঠালিয়া) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বলে জানিয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে শনিবার (১২ জুলাই) দেওয়া এক পোস্টে ড. ফয়জুল হক পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

তিনি ফেসবুকে লেখেন, আমি, ড. ফয়জুল হক, আজ গভীর আবেগ ও বিবেচনার সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি। ২০১৫ সালে গঠিত বিএনপির মালয়েশিয়া কমিটির সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৮ সালে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) এবং ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি-নলছিটি) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। দেশে ও বিদেশে থেকে বিগত বছরগুলোতে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী ও সামাজিক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। আমি সব সময় চেয়েছি একটি স্বাধীন, ন্যায়ভিত্তিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনীতি করতে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধীরে ধীরে বামঘেঁষা মতাদর্শের প্রভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যেসব ইসলামপন্থী দল ও ইসলামিক চিন্তাবিদরা অতীতে বিএনপির পাশে ছিলেন, আজ তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, যা আওয়ামী লীগের কথার সাথে বিস্ময়করভাবে মিলে যাচ্ছে। এসব অবস্থান আমার বিশ্বাস, চেতনাসম্মত রাজনীতির পরিপন্থী। আমি একজন ডানপন্থী রাজনীতিক হিসেবে আজ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি, আমাকে দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।

আমি পাথর দিয়ে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিকে ন্যূনতম সমর্থন দিতেও রাজি নই। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার স্পষ্ট সাহস রাখতে চাই।গত ১৬ বছর যেভাবে কথা বলেছি ঠিক তেমনি আমি ন্যায় ও মানবতার পক্ষে কথা বলতে চাই, দলীয় স্বার্থ নয়—দেশ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সাধারণ মানুষের অধিকারই আমার রাজনীতির মূলমন্ত্র।

বিএনপির এই নেতা আরও জানান, জুলাই বিপ্লবের পরে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমাকে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যা দলের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। আমি চাই না আমার অবস্থানের কারণে দল বিব্রত হোক। কারণ এখনো অনেক নেতা রয়েছেন, যারা পরিবর্তিত বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারছেন না—তারা আজও শেখ হাসিনার দেখানো পথেই হেঁটে চলেছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ত্যাগ এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের দেশের প্রতি ভালোবাসা আমি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো। তাঁদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও শুভকামনা রইলো।

তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বিষয়ে বলতে চাই—আমি ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতির সামনে আসতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। দলমত নির্বিশেষে সবার সমর্থন নিয়ে আমি মানবতা, সত্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের পক্ষে সংসদে কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, আজ থেকে আমি আর কোনো দলীয় পরিচয়ের ছায়ায় নয়—বরং একজন স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে ভালোকে ভালো ও মন্দকে মন্দ বলার সাহস নিয়ে পথ চলতে চাই। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই নীতিতে অবিচল থাকবো বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দলের বন্ধুবান্ধব, সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইলো।