৪০ দেশের অংশগ্রহনে বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু

প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৫

৪০ দেশের অংশগ্রহনে বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু

বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আমেরিকা, চীনসহ ৪০ দেশের অংশগ্রহণে ঢাকায় শুরু হয়েছে ৪ দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’। এই সম্মেলনের লক্ষ্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ পাইপলাইন তৈরি করা।

সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট-২০২৫’ অধিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়।

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ও বৈশ্বিক বিনিয়োগ নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হয়। অধিবেশনে দেশি-বিদেশি উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সম্মেলনে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা বলছে, বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতেই এই আয়োজন। তবে এর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করে বিডা।

সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের সম্ভাবনাময় পাঁচটি (নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিটিক্যাল, ডিজিটাল ইকোনমি ও টেক্সটাইল) খাতে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে উৎসাহিত করা হবে।

সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ২ হাজার ৩শ’ জনেরও বেশি লোক অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এদের মধ্যে ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

কাল বুধবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, রাজনীতিবিদ ও শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী এবং নীতি নির্ধারকরা অংশ নেবেন। প্রথম দুই দিনের কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কয়েকটি পার্শ্ব অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও পরামর্শদাতারা কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও চট্টগ্রামের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন।

আজ মঙ্গলবার একটি প্রতিনিধিদল নারায়ণগঞ্জের বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবে। আজ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য বিশ্বব্যাংক ও আইএলও’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

কাল বুধবার সম্মেলনের তৃতীয় দিনে স্টারলিংকের লাইভ ইন্টারনেট প্রদর্শনী হবে। বৃহস্পতিবার সমাপনী দিনে ডিজিটাল অর্থনীতি, টেক্সটাইল, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষি-প্রক্রিয়াকরণের ওপর ব্রেকআউট অধিবেশন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সম্মেলনে পাঁচজন উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়া, ২০-২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থানরত একজন বিদেশি ব্যবসায়ীর নাগরিকত্বের জন্য প্রস্তাব করা হবে।

সম্মেলনে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যবসায়ী নেতা যোগ দেবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত রোজি উইন্টারটন, উবারের সিনিয়র ডিরেক্টর মাইক অরগিল এবং স্যামসাং সিএন্ডটি-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি। সম্মেলনে বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সহযোগিতা করবে।

বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে সোমবার সকালে একদল বিদেশি বিনিয়োগকারী বিশেষ ফ্লাইটে চট্টগ্রামে গেছেন। সেখানে তারা কেইপিজেড পরিদর্শন করেন। বিডা জানায়, যারা গেছেন, তারা হলেন সেসব উদ্যোক্তা যারা মনে করছেন তাদের সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে পারি তা তারা সরেজমিনে দেখবেন।

সম্মেলন সম্পর্কে বিডা জানায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা পাল্টাতে হবে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে ব্যবসা করার যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত নিরসন করতে হবে। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিসহ তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে। সে তালিকা অনুযায়ী আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ করানো সম্ভব হবে।

বিডা জানায়, এবারের সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সম্ভাবনাময় মোট পাঁচটি সেক্টরে (নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিটিক্যাল, ডিজিটাল ইকোনমি ও টেক্সটাইল) বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে উৎসাহিত করা হবে। এরই অংশ হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা করবে, কথা বলবে যাতে ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে জয়েন্ট ভেঞ্চার তৈরি হয়।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট