নিজ ঘরেই স্বামীকে শিকল বন্দি করলেন স্ত্রী!

প্রকাশিত: ৯:০৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৫

নিজ ঘরেই স্বামীকে শিকল বন্দি করলেন স্ত্রী!

প্রায় পরিত্যক্ত ভাঙা একটি কাঁচা ঘর। পায়ে শিকল পড়া অবস্থায় মাটিতে বসে দিন কাটছে বাবুল বৈষ্ণবের। পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ওষুধের পাতাগুলো যেন নিঃশব্দে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে তার অসহায়ত্বের। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই, ঠিকমতো জোটে না খাবারও।

চরম এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের বদলপুর ইউনিয়নের ঝিলুয়া গ্রামে। পারিবারিক কলহের জেরে পাগলের তকমা দিয়ে নিজ ঘরেই বাবুল বৈষ্ণব (৫০) কে শিকলবন্দি করে রেখেছেন তার স্বজনরা। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, বাবুল মোটেও মানসিক ভারসাম্যহীন নন।

ভুক্তভোগী বাবুল বৈষ্ণব জানান, ছোট একটি ঘটনা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় তিনি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। এই ঘটনার পর তার স্ত্রী, ছেলে ও কাকা মিলে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে পাগলের তকমা দিয়ে নিজের ঘরে শিকলবন্দি করে রাখেন।

তিনি বলেন, ‘আমি একেবারে সুস্থ মানুষ। কোনো মানসিক সমস্যা নেই আমার। শুধুমাত্র পারিবারিক ঝগড়ার কারণে ছেলে, স্ত্রী আর কাকা মিলে আমাকে বেঁধে রেখেছে। ঠিকমতো খাবার দেয় না। আমার বৃদ্ধা মা মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিলে তাকেও গালাগাল করা হয়। মাঝে মধ্যে খাবারের থালা মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। আধা বালতি পানি দিয়ে গত ২০ দিনে মা আমাকে ৩-৪ দিন গোসল করিয়েছে। অথচ কোনোদিন কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি।’

বাবুল বলেন, ‘সবাই মিলে মারপিট করছে। আমার চোখ, বাহুসহ বিভিন্ন স্থান ফুলে গেছে। কিন্তু ওষুধও এনে দেয়নি। আমার মা কিছু ওষুধ এনে দিয়েছে।’

বাবুল দাবি করেন, তিনি অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। ছেলে-মেয়েকে বড় করেছেন। এখনও তিনি কৃষি কাজের বাইরে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবজির বীজ বিক্রি করেন।

অভিযুক্ত বাবুলের কাকা রথীন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘সে প্রায়ই পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে। দা নিয়ে হামলা করতে আসে। যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই তাকে শিকলে বেধে রাখা হয়েছে।

তবে স্থানীয়রা এতে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের দাবি, বাবুল পুরোপুরি সুস্থ। শুধুমাত্র পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও কলহের জেরে এই অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনি। তাদের মতে, পরিবারের পক্ষ থেকেই তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে এমন নির্যাতন চলে আসছে।

বাবুল বৈষ্ণবের পুত্র টিটুর মুটোফোন যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি।

ঝিলুয়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য দিলীপ কুমার চৌধুরী বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। তবে এখন যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি, আমি খোঁজ নেব। তবে আমার জানা মতে তার আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও পাগল বলা যাবে না। এমনকি সে কখনো কারো সাথে খারাপ আচরণ করেছে বলেও আমার জানা নেই।

বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুষেনজিৎ চৌধুরীর মুটোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও উনার মুটোফোনটি বন্ধ থাকায় উনার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট