বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের, শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ

প্রকাশিত: ১০:৪৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৪

বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের, শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে আজ বিকেল থেকে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। হঠাৎ করে রাত ৮টা ২০ মিনিটে মাইকে ঘোষণা দিয়ে একদল বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সেনাবাহিনী। পরে বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে সাউন্ডগ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে বিক্ষোভকারী।

তবে বিক্ষোভকারীরা আবারও জড়ো হচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা রাষ্ট্রপতির এখনই পদত্যাগের দাবি করে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে গণ-অধিকার পরিষদের তারেক রহমানকে দেখা গেছে। এছাড়া প্রায় ১ হাজার ২০০ বিক্ষোভকারী এতে অংশ নিয়েছে।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে এক ভ্যান পুলিশ আসে। তবে আন্দোলনকারীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে তাদের বঙ্গভবনের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে একটি জলকামান এলেও আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে তা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়।

এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া একজন সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়েছেন।

আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন- ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। সাউন্ড গ্রেনেডে আহত তরুণের নাম আরিফ (২০)।

গুলিবিদ্ধ ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করি। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়ি। ওখানে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় কয়েকটি গুলি এসে আমার পায়ের গোড়ালিতে ও কোমরের নিচে লাগে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ যদি আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় তাহলে আমরা কেন দেশ স্বাধীন করলাম? পুলিশ আমাদের বন্ধু কিন্তু তারা আমাদের ওপর কেন গুলি চালাল?

গুলিবিদ্ধ অপর ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে আমরা বঙ্গভবনের সামনে এসেছিলাম। আমি ব্যবসা করি। এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।

আহত আরিফ পড়েন সিদ্ধেশ্বরী কলেজে। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গভবনের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করছিলাম। ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি চালায়। এ সময় আমার পায়ের ওপর একটি সাউন্ড গ্রেনেড এসে পড়ে। এতে আমি আহত হই।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, বঙ্গভবনের সামনে থেকে আহত অবস্থায় তিনজন এসেছেন। এদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।

এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলন করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন ও ছাত্রজনতা। তাদের মধ্যে কিছু আন্দোলনকারী বঙ্গভবনের সামনের রাস্তায় গাছের শুকনো ডাল ভেঙে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আগুনকে ঘিরে আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিকেল থেকে বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে ছাত্রজনতা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সন্ধ্যার পর আন্দোলনকারীদের মধ্যে ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি সংগঠন উপদেষ্টাদের আশ্বাসে বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরে যান।

তবে আরও কয়েকটি সংগঠন তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। এর মধ্যে রাত ৮টার দিকে কিছু আন্দোলনকারী বঙ্গভবনের সামনের রাস্তায় গাছের শুকনো ডালে আগুন ধরিয়ে পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন।

এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ডিএমপি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে সেজন্য স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি সেখানে সহযোগিতায় রয়েছেন সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’

তবে সম্প্রতি মানজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি।’

এরপর নতুন করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ।


 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট