৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২৩
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে গতিতে এগোচ্ছে, ঠিক একই গতিতে ভাঙছে সামাজিক ও পারিবারিক জীবন। অর্থনৈতিক জটিলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক জটিলতা।
নব্বইয়ের দশক থেকেই মূলত দেশের পরিবারগুলো ছোট থেকে শুরু করে, আর এখন? বড় শহরগুলোতে পরিবার টিকছেই না। বিয়ে ভেঙে যাওয়া এখন যেন ট্রেন্ড। কিন্তু কেন? একটাই উত্তর-পরকীয়া।
একটা সময় ছিল যখন বিয়েতে নাচ-গান ছিল ফিল্মি একটা ব্যাপার, বর্তমানে বিয়ের আগে সবাই আয়োজন করে নাচ শেখে, বিয়ের দিন পারফর্ম করে। অর্থাৎ ফিল্মি ব্যাপারগুলো এখন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ঠিক একইভাবে পরকীয়াও এখন আর শুধু ফিল্মে বা নায়ক-নায়িকাদের জীবনে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের সর্বস্তরে।
পরকীয়া একটি সমাজ বিধ্বংসী বিকৃত মানসিকতা। পরকীয়ার জেরে স্বামী স্ত্রীকে খুন করছে। স্ত্রী স্বামীকে খুন করে খাটের নিচের মেঝেতে পুঁতে রাখছে। পরকীয়ার মোহে খুন হচ্ছে সন্তান। এমনকি পরকীয়ায় লিপ্ত মসজিদের ইমাম সাহেব খুন করে এসে ফজরের নামাজে ইমামতি করছেন। তারপরও এ সমস্যাকে যদি আপনারা শুধুই পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর খবর মনে করে এড়িয়ে যান তবে এ বিপদ আমাদের সবার জন্যই অপেক্ষা করছে। আর যদি এটাকে আমরা বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন, তবে এর থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় আমাদের ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় তথা ইসলামিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা।
সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে নারীদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি পরপুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। স্ত্রীর সৌন্দর্য স্বামীকে তার প্রতি আনুরাগী করলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে নারীর সৌন্দর্য তার স্বামী ছাড়া অন্যকে আকর্ষণ করলে তা কেবল অশান্তিই বাড়াবে।
ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। সূরা আহজাবের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন। যদিও এ আয়াতটি নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছিল, তবে তা সব মুমিনের বেলায় প্রযোজ্য।
সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ পুরুষ-নারী সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। ‘ (সূরা বনি ইসরাইল, ৩২)
সূরা নূরে ব্যভিচারের শাস্তি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। ’ (সূরা নূর, ২)
রাসুলুলুল্লাহ (সা.) ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুসলমানরা! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। ‘ (বায়হাকি, হা নম্বর-৫৬৪)
স্ত্রীদের তাদের দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রেও সাবধনতার বিধান রেখেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না। ’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য। ’ (মুসলিম, ২৪৪৫)
তাহলে বুঝতেই পারছেন ইসলাম সর্বক্ষেত্রে পরকীয়ার মতো ব্যভিচার থেকে বিরত থাকতে বলেছে। এর বিপরীতে কঠিন শস্তির বিধান রেখেছে। আল্লাহ আমাদের জৈবিক চাহিদা, স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আর শয়তানের প্রলোভন সব বিষয়ে অবগত। তাই তার দেওয়া বিধানের পরিপূর্ণ অনুসরণ আমাদের জীবনকে করবে সহজ ও সাবলীল।
আসুন আমরা সেই চেষ্টা করে যাই। আল্লাহ আমাদের সবার পারিবারিক জীবনকে হেফাজত করুক। আমিন।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D