সুন্দর মৃত্যু

প্রকাশিত: ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২৩


মাহমুদা সিদ্দিকা


আমরা একটা সুন্দর মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি। যে মৃত্যু আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে আসবে চিরন্তন সফলতা। যে সফলতা কখনো শেষ হবে না। তার মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। চার দিকে শুধু সুখের ছড়াছড়ি। ঝগড়াঝাটি হিংসাবিদ্বেষ রেষারেষি কিছুই থাকবে না। উপচে পড়া সুখ আর অন্তহীন স্বাধীনতা শুধু থাকবে। যে মৃত্যুতে আত্মা বের হবে খুব আরামে। এমন মৃত্যু আমরা সবাই চাই।
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। (আল আনকাবুত-৫৭)

এমন মৃত্যু পেতে হলে নিশ্চয়ই আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। যিনি সৃষ্টি করেছেন, জীবন দান করেছেন তার দেয়া জীবনবিধান হুকুম আহকাম পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

মৃত্যুর কোনো বয়স নেই। নেই কোনো নির্ধারিত সময়। মৃত্যুটা পুরোপুরি আল্লাহর হাতে। তিনি যখন যেভাবে যার মৃত্যু চাইবেন তখনই তেমনিভাবে তার মৃত্যু হবে। দুনিয়ার কোনো শক্তি মৃত্যু আটকে রাখতে পারবে না। গর্ভ থেকে শুরু করে দুধের শিশু, বালক বালিকা, কিশোর কিশোরী, যুবক যুবতী যেকোনো বয়সে যেকোনো সময়ে মৃত্যু চলে আসতে পারে। মৃত্যু আসার এক মুহূর্ত আগেও কেউ জানতে পারবে না যে একটু পরে তার মৃত্যু হবে। তাই মৃত্যুর জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি থাকা চাই। কিছু সৎ আমল নিয়ে যেন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারি। জিন্দেগি কোন কাজে ব্যয় করেছি তার সদুত্তর যেন দিতে পারি।

অবশ্যই মন্দ ও আজেবাজে কথা কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নিজের নফসকে।
সাত বছর বয়স থেকে সালাত পড়া, কুরআন শিক্ষা করা, অজু গোসলের নিয়মকানুন জানতে হবে। সর্বদা সত্য কথা বলার অভ্যাস একদম ছোট্ট থেকেই করতে হবে। ফরজ হলে পর্দা মেনে চলতে হবে। পর্দা শুধু মেয়েদের জন্য নয়। ছেলেদেরকেও পর্দার বিধান পুরোপুরি মেনে চলতে হবে।

হাসিমুখে কথা বলা, সালাম দিয়ে কথা শুরু করা, বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা, বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা, ছোটদের স্নেহ করা এই সুন্দর অভ্যাসগুলো নিজের আচার-আচরণ ও কথাবার্তার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে হবে। ঝগড়াঝাটি, হিংসাবিদ্বেষ, মারামারি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। মিছামিছি লোক হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলা জঘন্যতম অপরাধ। এই কাজ কখনো করা ঠিক না। ছোট ছোট ভালো কাজ, ভালো কথা পৌঁছে দিতে হবে বন্ধুদের মাঝে। ক্লাসের সহপাঠীরা বই নোট ধার চাইলে খুশি মনে ধার দেয়া একটি ভালো কাজ। কোনো বন্ধু বিপদে পড়লে সবাই মিলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া; অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া এসবই ভালো কাজ। সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল অবিচল থাকা। কোনো বন্ধু বিপথে গেলে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সৎ পথে ফিরিয়ে আনা অন্যতম ভালো কাজ। যেই বন্ধুটি ঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে না, তাকে সালাতের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়া এবং তাকে নিয়ে সালাত পড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি তোমরা বুঝবে না? (আল মু’মিনুন-৮০)
মৃত্যু কখন আসবে আমরা জানি না, মৃত্যুর জন্য সবসময় তৈরি থাকতে হবে। আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য একটাই, তাতে যেন সফল হতে পারি। জীবন যেমন তেমনভাবে চলে যাক আপত্তি নেই। কিন্তু মৃত্যুটা যেন সুন্দর হয়। মু’মিন মুত্তাকিনদের মতো হয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মতো হয়, এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।
ক্ষণিকের এই জীবন হঠাৎ থেমে যাবে, থেমে যাবে কর্মচাঞ্চল্য। কিন্তু আখেরাতের জীবন কখনো শেষ হবে না। হবে না পরকালীন জীবনে কারো মৃত্যু। অনন্ত কালের জীবনের পাথেয় এই অল্প সময়ে জোগাড় করতে হবে। তৈরি হতে হবে পরবর্তী জীবনের জন্য। সুখে শান্তিতে থাকার জন্য।

ইয়া আল্লাহ আপনার রহমত বরকত আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো বর্ষণ করুন। আমাদের মন্দ কথা-কাজগুলো মাফ করে দিন। আমাদের ভালো কাজগুলো বাড়িয়ে দিন আপনার অসীম কুদরতের দ্বারা।
জান্নাতি ফেরেশতা পাঠিয়ে আমাদের মৃত্যু দিন। আমাদের মৃত্যুকে সহজ ও সুন্দর করে দিন। আমরা আপনার দয়ার মুখাপেক্ষী।


লেখক : শিবপুর, নরসিংদী থেকে