আজ ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে চুয়াত্তরে আ’লীগ

প্রকাশিত: ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২২

আজ ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে চুয়াত্তরে আ’লীগ

আজ ২৩ জুন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে তিয়াত্তর পেরিয়ে চুয়াত্তর বছরে পা রাখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনে রোজ গার্ডেন প্যালেসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দেশের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলটি। দীর্ঘ পথচলায় দলটির অনেক বড় বড় সফলতা যেমন রয়েছে, তেমনি কিছু ব্যর্থতাও আছে। কিছু কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এমনভাবে কাঁধে ছেপেছে যার ফলে বড় বড় সফলতাগুলোও অনেকটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছরের ইতিহাসে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অর্জন ঐতিহাসিক ও অনস্বীকার্য। কালের পরিক্রমায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার টানা ২১ বছর পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়াও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসনভার আওয়ামী লীগের হাতেই রয়েছে। টানা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাটা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় কৃতিত্ব এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ডও বটে।

তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্নের মুখে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপে থাকাবস্থায় সফলভাবে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও সেই বিতর্ক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি শাসক দলটি। অবশ্য এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ, ভারতের সাথে ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময় চুক্তি, মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেলের দৃশ্যমান অগ্রগতিসহ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নানা সফলতার দিক রয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ আওয়ামী লীগ এবং তার সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল।

সেই চ্যালেঞ্জ উতরে ২৫ জুন জমকালো আয়োজনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় পদ্মার ওপারের ২১ জেলার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে তা ভূমিকা রাখবে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের লোকজন।

এ দিকে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলটির ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার দেয়া এক বাণীতে সকল নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখণ্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সব উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা লড়াই-সংগ্রাম ও মানুষের আস্থা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জনমানুষের সংগঠনে পরিণত করে শক্তিশালী করেছে। দলের নেতাকর্মীদের মেধা, পরিশ্রম, ত্যাগ ও দক্ষতায় আওয়ামী লীগ আরো গতিশীল হবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর দলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এবারো করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল সাড়ে ১০টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন।

গতকাল এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদায় ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জেলা, উপজেলাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট