সিলেটগামী পারাবত ট্রেনের ৩টি বগি আগুনে ভস্মিভূত : তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২২

সিলেটগামী পারাবত ট্রেনের ৩টি বগি আগুনে ভস্মিভূত : তদন্ত কমিটি গঠন

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও মনু রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী ডাকবেল-চককবিরাজি এলাকায় সিলেটগামী আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে। তবে আগুনে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে প্রায় দুঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শনিবার (১১ জুন) বেলা ১টার দিকে ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সাড়ে ৩ ঘন্টা পর বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের সময় সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ট্রেনযাত্রী প্রত্যক্ষদর্শী সুকেশ দাশ জানান, আমি শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে উঠি। ট্রেনটি শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করার পরই টয়লেটের পাশে থেকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এসময় যাত্রীরা হাল্লা চিৎকার শুরু করেন।

সিলেটগামী ট্রেনযাত্রী আব্দুল জব্বার জানান, দুপুর ১টার দিকে আন্ত:নগর পারাবত ট্রেনের বগিতে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেলে যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজনও এগিয়ে আসে। এসময় প্রথমে দ্রুত যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। স্থানীয় লোকজন হাড়ি পাতিল দিয়ে ট্রেনের বগিতে আগুন নিভানোর জন্য পানি ছিটাতে থাকে। পরে ফায়ার সার্র্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভাতে শুরু করে।

ডাকবেল এলাকার স্থানীয় পতনঊষার ইউপি সদস্য সিরাজ খানসহ স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর প্রায় ১টার দিকে শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করে। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই ট্রেনের জেনারেটরের বগিতে আগুনের সূত্রপাত দেখা যায়। পরবর্তীতে তেলের ট্রাংকি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৩ কি.মি. অতিক্রম করার পর ডাকবেল-চককবিরাজি এলাকায় যাত্রীদের হাল্লা চিৎকারে ট্রেনটি থামানো হয়। তখন যাত্রীরা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীদের সহযোগিতায় ট্রেনের কর্তৃপক্ষ আগুন লাগা তিনটি বগি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ট্রেনের জেনারেটর বগি ও পার্শ্ববর্তী যাত্রীবাহী দু’টি এসি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনার প্রায় ১ ঘন্টা পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কমলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পরে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে সর্বমোট চারটি অগ্নিনির্বাপক দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় ট্রেনের তিনটি বগি ব্যতীত কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার, কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান, শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ, রেলওয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা খায়রুল কবিরসহ প্রশাসন ও রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।

দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় ট্রেনের সামনের ৮টি বগির যাত্রীরা কুলাউড়া স্টেশনে ও পিছনের বগির যাত্রীরা নিজ নিজ খরচে সড়কপথে সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছান।

আন্ত:নগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মো. ইসমাইল বলেন, ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায় চাকার মধ্যে আগুন ও পরে তেলের ট্রাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ট্রেনটি প্রায় ১টার দিকে শমশেরনগর স্টেশন ছেড়ে যায়। এঘটনার পর থেকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লংলা স্টেশনে ও চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়ে। তবে আগুন পুরোদমে নিয়ন্ত্রণে আসলে বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিটের সময় ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মৌলভীবাজারের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কি কারণে আগুন লাগে তা এখনো জানা যায়নি।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্থানীয় লোকদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আব্দুল হককে আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।


 

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট