মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির সম্পদ : খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২১

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির সম্পদ : খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির

ওয়েছ খছরু : খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে সামনে রেখে ক্ষোভ ঝাড়লেন আরিফুল হক চৌধুরী। বললেন- ‘কেবলমাত্র গ্রুপিং রাজনীতির কারণে সিলেটের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী নেতৃত্বে আসতে পারছেন না। এতে দল আরও বেশি দুর্বল হচ্ছে। এজন্য তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে সব কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।’ জবাবে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরও আরিফুল হক চৌধুরীর এই প্রস্তাবকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। জানালেন; ‘আমি মেয়রের বাসায় যাবো। দু’জন মিলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের তালিকা করবো। তারা যাতে মূল্যায়িত হয় সে ব্যাপারে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।’ আচমকা এ ঘটনাটি শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটেছে সিলেটে। ক’বছর ধরে সিলেট বিএনপির কর্তৃত্ব নিয়ে মুক্তাদির ও আরিফের মধ্যে নীরব লড়াই চলছে।

বর্তমানে সিলেট বিএনপিকে পুনর্গঠনের ঘটনায় এই দুই নেতা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের দূরত্ব নিয়ে খোদ বিএনপিতেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। নেতারাও হয়ে পড়েছেন বিভক্ত। এই অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সদলবলে বিএনপি ছেড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামানও। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্ট্রার আব্দুস সালামের ভাতিজির বিয়েতে শুক্রবার সিলেটে আসেন যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব। রাতে বিয়ের আমন্ত্রণ হওয়ায় দুপুরে চলে আসেন তিনি। সন্ধ্যায় নগরীর বারুতখানা এলাকার একটি হোটেলে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের আহ্বান করেন যুবদল সভাপতি। সিলেট যুবদলের নেতারা জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় যখন বৈঠক বসেছিল তখনই সেখানে গিয়ে হাজির হন সিলেটের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি ওই হোটেলের আরেকটি কক্ষে সিটি করপোরেশন সম্পর্কিত এক সভায় ছিলেন। ওই সভা শেষ করে তিনি যুবদলের বৈঠকে ঢুকে যান। এর একটু পর সেখানে এসে উপস্থিত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বর্তমানে সিলেট বিএনপির অভিভাবক খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। দুই নেতা একসঙ্গে পেয়ে উজ্জীবিত হন যুবদলের নেতারা। প্রায় আড়াই বছরের মধ্যে এই দুই নেতাকে একসঙ্গে কোনো মঞ্চে দেখা যায়নি। যুবদল নেতারা জানান, এক মঞ্চে দুই নেতা বসেছিলেন। আর মাঝখানে ছিলেন যুবদল সভাপতি। তারা যুবদলের রাজনীতির পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও কথা বলেন। বক্তব্যে তুলে আনেন সিলেটের প্রসঙ্গও। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের আগেই ওই বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সিলেটের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী।


বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী এই পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘এখন ঐক্যবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ থেকেই বিএনপিকে শক্তিশালী করে মাঠের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।’ সিলেটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন- ‘কেবলমাত্র গ্রুপিং রাজনীতির কারণে সিলেটের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী নেতৃত্বে আসতে পারেনি। এতে দল আরও বেশি দুর্বল হচ্ছে। এজন্য তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে সব কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।’ আরিফ জানান, ‘সিলেটের বিভিন্ন ইউনিটে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। সিনিয়র নেতাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থানের কারণে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বাদ পড়েছেন। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। এভাবে দল শক্তিশালী হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আরিফ। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়িত করা।


এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বিএনপির ‘সম্পদ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ধারণা করেছিলাম তিনি হেরে গিয়েছেন। কিন্তু লড়াই করে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। আরিফুল হক চৌধুরী সাহস ও মনোবল সবার জন্য শিক্ষণীয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’ তিনি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আশস্ত করে বলেন, ‘আমি মেয়রের বাসায় যাবো। দু’জন মিলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের তালিকা করবো। তারা যাতে মূল্যায়িত হয় সে ব্যাপারে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। সিলেটে দলকে শক্তিশালী করতে আমরা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবো।’ মুক্তাদির বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাসহ নানা আন্দোলনে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেবলমাত্র ঐক্যবদ্ধতাই দলকে শক্তিশালী করতে পারে বলে জানান তিনি।’ শেষ বক্তা হিসেবে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব সিলেটের দুই নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘আমরা খুব খুশি আমাদের দুই অভিভাবক এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। যুবদল গ্রুপিং নয়, ঐক্যবদ্ধতায় বিশ্বাস করে। সিলেটে যদি ত্যাগী নেতাকর্মীরা বাদ পড়েন কিংবা কেউ মূল্যায়িত না হন সেটি বিবেচনায় নেয়া হবে। কোনোভাবে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন হবে না।’ বৈঠকে উপস্থিত থাকা জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘দুই নেতার উপস্থিতি আমাদের বৈঠককে বর্ণিল করে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে যুবদলের কাজ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে পারলেই অসাধ্যকে সাধন করা যায়। শুক্রবার সন্ধ্যার বৈঠক সিলেট যুবদলের জন্য একটি অনুপ্রেরণা বলে জানান তিনি।’ জেলা যুবদলের সিনিয়র সদস্য লিটন আহমদ জানিয়েছেন, ‘ওই বৈঠকে সিলেট জেলা ও মহানগরের সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের অর্জন অনেক। এই অর্জনকে সামনে রেখে আমাদের আগামীদিনের কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হবে বলে জানান তিনি।


ব্যারিস্টার সালামের ভাতিজির বিয়েতে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা

কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালামের ভাতিজির বিয়ে উপলক্ষে সিলেট জাতীয়তাবাদী পরিবার এক মিলনমেলায় রূপ নেয়। গত শুক্রবার রাতে দক্ষিণ সুরমার কুশিয়ারা কনভেনশন হলে ব্যারিস্টার এম এ সালামের ভাতিজির বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিয়েতে কেন্দ্রীয় বিএনপি, যুবদল, জেলা ও মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামিম, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি কলিম উদ্দীন মিলন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি নাছের রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মুর্তাজুল করিম বাদরু, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ্‌ তালুকদার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীদার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, ফয়সল আহমদ, ডাব’র সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শামীমুর রহমান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি, সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামিম, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সিলেট বিভাগীয় টিমের সদস্য দিপু সরকার, দুলাল আহমদ, আনসার উদ্দীন, সোহেল রানা, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দীকুর রহমান পাপলু, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নজিবুর রহমান নজিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহ নেওয়াজ বক্ত চৌধুরী তারেক, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন প্রমুখ। বিয়ে উপলক্ষে বিএনপি পরিবারের মিলনমেলায় দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট