স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার প্রতারণায় সর্বস্ব হারিয়েছেন প্রবাস ফেরত ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২০

স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার প্রতারণায় সর্বস্ব হারিয়েছেন প্রবাস ফেরত ব্যবসায়ী

সিলেট সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক ফখরুল আলমের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। তার সাথে ব্যবসার অংশীদার হয়ে মূলধনের ১০ লাখ টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না এখন; উল্টো ফখরুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। রোববার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন খাদিম নগর ইউনিয়নের ছালিয়া গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আমি দুবাইতে ছিলাম। দেশে ফিরে ২০১৬ সালে ফখরুল আলমের সাথে পাথর ব্যবসা শুরু করি। এ সময় তাকে নগদ ১০ লাখ টাকা প্রদান করি। ২০১৮ পর্যন্ত আমাদের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল। এরপর আমি নিজে ব্যবসা থেকে আলাদা হয়ে যাই। এ সময় তিনি আমার মূলধনের ১০ লাখ টাকা লভ্যাংশসহ কিস্তিতে পরিশোধ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন। পরবর্তীতে গত ২০ আগষ্ট ফখরুলের কাছে আমার মূলধনের ১০ লাখ টাকা ফেরত চাইলে তিনি ১০ লাখ টাকার একটা চেক আমাকে দেন। ২৫ আগস্ট চেকের সম্পূর্ণ টাকা আমি উত্তোলন করতে পারবো বলে নিশ্চয়তাও দেন তিনি।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফখরুল ও আমার যৌথ মালিকানার একটা মোটরসাইকেল ছিল । আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার দিলোয়ার হোসেন দিলু বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসে সাইকেল ক্রয় বাবদ আমার অংশ ৩০ হাজার টাকা ফখরুল আমাকে দিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত দেন। ২৪ আগস্ট ফখরুলের উপস্থিতি তার সাথে আমার যাবতীয় লেনদেন সমাধান হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে জানতে পারি থানায় আমার নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবুও ২৫ আগস্ট ১০ লাখ টাকার চেক নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের নয়াসড়ক শাখায় যাই। চেক জমা দিলে একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই বলে জানান কর্তৃপক্ষ। ফলে ঐদিনই বিকেলে আমি এ ব্যাপারে এয়ারপোর্ট থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করি। অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব পড়ে এয়ারপোর্ট থানার এসআই বাশারের উপর। তিনি বিষয়টি আপোষ মিমাংসার জন্য উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেন। কিন্তু ফখরুলের একগুয়েমির কারণে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ২৭ আগস্ট ফখরুল আবারও থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদে অভিযোগ দাখিল করেন। এভাবে নানা মিথ্যা অভিযোগ অপবাদ দিয়ে তিনি আমার নামে একের পর এক জিডি দাখিল করতে থাকেন। তার স্বজনদের দিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ৯টি জিডি দায়ের করেন তিনি। এর সবগুলোই ছিল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এরপর হঠাৎ গত ২৩ নভেম্বর জানতে পারি আমার নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে এবং সেদিনই আমাকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান দেয়া হয়। জেল থেকে বের হয়ে জানতে পারি আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিডির প্রেক্ষিতে সমন জারি হয়েছে এবং আমি নাকি তা পেয়েছি বলে স্বাক্ষরও করেছি। কিন্তু আমি কোন সমনই পাইনি এবং সমন প্রাপ্তির যে পত্রে আমার স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে, আসলে সেটি আমার স্বাক্ষর নয়। এই অভিযোগটির তদন্তকর্মকর্তা এয়ারপোর্ট থানার এসআই অমিত মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এমন জালিয়াতি করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। কারণ, তদন্তকালে তিনি আমার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ফখরুল আমাকে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জাল কাগজপত্র তৈরি করে কোর্টে জমা দিয়েছিলেন। খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দিলোয়ার হোসেন সেই কাগজপত্র দেখে ছাড়পত্রও দেন। অথচ আমি ১ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই গিয়েছিলাম এবং দেশে ফিরেছি ৯ আগস্ট ২০১৬ সালে। চেক ডিজঅনার হওয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রি ডাকে ফখরুল আলমকে আমি একটি উকিল নোটিশ পাঠাই। এই নোটিশ পাওয়ার পর ফখরুল, তার ভাই সামসুল ও শ্যালক শাহীন চৌধুরী গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় ছালিয়ার সাকেরা পেট্রোল পাম্পের পাশের হোটেলের সামনে আমার উপর হামলা করে। ৭ অক্টোবর এসএসপি কমিশনারের নিকট আমি লিখিত অভিযোগ দেই। এতেও তাদের হুমকি ধমকির অবসান না হলে আমি ২৩ অক্টোবর এয়ারপোর্ট থানায় একটি জিডি দায়ের করি।

আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফখরুল আলম আমার মত অসংখ্য মানুষকে হয়রানী করেছে। যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। সরকারদলীয় নেতা হওয়ায় সে সাধারণ ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও জিডি করেছে। এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদ সংষিøষ্ট মহল ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট