মানবতাবাদী আলহাজ্ব এম এ আহাদের চিরবিদায়

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০

মানবতাবাদী আলহাজ্ব এম এ আহাদের চিরবিদায়

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম : বিলেতের জনপ্রিয় ও প্রবীন কমিউনিটি নেতা,জগন্নাথপুর বৃটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান, অনেক মসজিদ-মাদরাসা-এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব এম এ আহাদ আমাদের মাঝে আর নেই-ভাবতে কষ্ট হচ্ছে(ইন্না –রাজিউন)। বলতে গেলে, অনেকটা পরিণত বয়সেই তার মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু, কিছু কিছু মৃত্যু মানুষকে পীড়া দেয়, ব্যথিত করে। আলহাজ্ব এম এ আহাদের মৃত্যু এমনই।
তাঁর বয়স প্রায় আশি বছরেরও বেশী হলেও তিনি ছিলেন অনেকটা প্রাণোচ্ছল। স্বজন-শুভার্থী-শুভাকাঙ্খীদের সাথে তার শিশু সুলভ আচরণ মুগ্ধ
করতো সকলকে। মসজিদ-মাদ্রাসা-এতিমখানা এমনকি দরিদ্র লোকজনকে ‌‌নিরবে সহযোগিতার বিষয়ে তার জুড়ি মেলা ভার।
তিনি প্রথম প্রজন্মের একজন বিলেত প্রবাসী বাঙালি হলেও তিনি ছিলেন নির্লোভ-নিরহংকারী-নির্মোহ।তাঁর চলনে-বলনে ছিল সারল্য। জীবন-যাপন করতেন একেবারে সাদামাঠা। সিলেট নগরীর পাঠানটুলা ‌আহাদ ভিলা তার স্মৃতি হিসেবে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। দেশে আহাদ ভিলা এবং বিলেতের ক্যান্টের বাসায় ছিল সবশ্রেণীর মানুষের অবাধ যাতায়াত। জগন্নাথপুরের কৃতি সন্তান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ , সাবেক স্পীকার মরহুম আলহাজ্ব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এবং বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সাথে ছিল তার ব্যক্তিগত হৃদ্যতা-সখ্যতা। প্রবাসে কিংবা দেশে তাঁরা খোজ করতেন, বাসায় যেতেন আলহাজ্ব এম এ আহাদের।
মঙ্গলবার লন্ডন সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়) শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন এ মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর ছেলে রুহি আহাদ পিতার জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন।
আলহাজ্ব আব্দুল আহাদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের কাঁঠালখাইর গ্রামের বাসিন্দা। করোনার প্রথম দফা সংক্রমণের সময় তিনি দেশে ছিলেন। মাস দুয়েক আগে তিনি বিলেতে চান। মাত্র ১৫ দিন আগে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর তিনি আইসিইউতে ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সাংবাদিকদের সাথে আলহাজ্ব এম এ আহাদের ছিল গভীর সখ্যতা। তিনি বিলেত থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিন নতুন দিন পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ছিলেন। নতুন দিন সম্পাদক মুহিব চৌধুরী তার একান্ত আপনজন।লন্ডনের বাংলা মিরর সম্পাদক এম এ গণি, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের, সাংবাদিক তাইছির মাহমুদ অনেকের সাথেই ছিল তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক।
নানা বলে সম্বোধন করতাম তাঁকে। লন্ডন থেকে প্র্রায়শ ফোন করতেন প্রিয় আহাদ নানা। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে প্রথমেই সাংবাদিক কাউসার চৌধুরী, মঈন উদ্দিন মঞ্জু, সাঈদ নোমান-এর খোঁজ নিতেন। তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর কথাও বলতেন। সিলেটের সাংবাদিক আবু তালেব মুরাদ, প্রবীন ফটো সাংবাদিক আতাউর রহমান আতা, এহিয়া চৌধুরীসহ আরো অনেকের সাথেও ছিল তাঁর সুসম্পর্ক।
জগন্নাথপুর বৃটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মোবারক আলী জানান, চারদিন আগেও মোবাইলে তাঁর(আহাদ) সাথে তার কথা হয়েছে। তাঁর মৃত্যু সকলকে অভিভাবক শুন্য করে ফেলেছে বলে জানান তিনি। করোনা সব হিসেব-নিকেশ লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে বলে জানান এ প্রবাসী।
জিএসসি সাউথ ইস্ট রিজিওনের ট্রেজারার সুফি সুহেল আহমদ জানান, এম এ আহাদের মৃত্যু কমিউনিটির বিশাল ক্ষতি।
আলহাজ্ব এম এ আহাদ সিলেট নগরীর পীর মহল্লাস্থ আলহাজ্ব আব্দুল এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া, জগন্নাথপুরের নয়াবন্দর হাইস্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা, নগরীর পাঠানটুলাস্থ শ্রাবণী জামে মসজিদ ও গোয়াইনঘাটে তার পিতা আইনুদ্দিন ও মাতা আস্তই বিবির নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও পাঠানটুলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি।শেষ বয়সে তিনি নিজ গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমও বেশ এগিয়েছিল। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও বিদ্যালয়ের সাইট পরিদর্শন করেন। করোনার সংক্রমণের কারণে এর কার্যক্রম কিছুটা স্থিমিত হয়ে যায়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগেই মৃত্যুর কাছে হার মানলেন পরোপকারী এ ব্যক্তিত্ব।
আলহাজ্ব এম এ আহাদ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। জগন্নাথপুর বৃটিশ-বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ফাউন্ডার ছাড়াও তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যুক্তরাজ্য শাখার ফান্ড রাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে সেখান থেকে কয়েক কোটি টাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সিলেটের ফান্ডে এসেছে। এছাড়া, সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতাল, জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
আল্লাহ প্রিয় আহাদ নানাকে জান্নাতবাসী করুন-এই প্রার্থনা করছি।