রংপুরে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ : এএসআই রায়হানুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পিবিআই

প্রকাশিত: ১০:০৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২০

রংপুরে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ : এএসআই রায়হানুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পিবিআই

রংপুরের হারাগাছে পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজুর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত রায়হানুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বুধবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টায় রায়হানুলকে মেট্রোপুলিশের হেফাজত থেকে পিবিআইতে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর আগে দু’দিন তাকে মেট্রোপলিটন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ২২ ধারায় দেওয়া ঘটনার বর্ণনায় রাহেনুলের সম্পৃক্ততার কথা জানান ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী।

এদিকে গণধর্ষণের এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অপর আসামি আবুল কালাম আজাদ ও বাবুল হোসেনকে বুধবার সন্ধ্যায় আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে একই বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ধষর্ণের কথা স্বীকার করেন তারা।

স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় সহযোগিতার অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ও সুরভী আক্তার সমাপ্তিকে মঙ্গলবার আদালতে নেয়া হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আদালত তাদের রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার নির্যাতিতা স্কুলছাত্রীকে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে বিকাল ৫টায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলমের আদালতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ওই নির্যাতিতা স্কুলছাত্রী গত ২৩ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম কর্তৃক ধর্ষণ ঘটনার কথা জানায়। এর পর দিন শনিবার ২৪ অক্টোবর আশ্রিতা সুমাইয়া আক্তার মেঘলার বাসায় কীভাবে গণধর্ষণের শিকার হয় সেসব বিস্তারিত ঘটনা আদালতে বর্ণনা করে। আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম ২২ ধারায় তার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।

পরে একই আদালতে সন্ধ্যায় গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি আবুল কালাম আজাদ ও বাবুল হোসেনকে নিয়ে আসা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আদালত তাদের ওই জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামিরা ওই ধর্ষণ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার দিন তাদের সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ও সুরভী আক্তার সমাপ্তি সেখানে খদ্দের হিসেবে ডেকে নেয়। পরে তারা ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে আদালতে জানিয়েছে।

পিবিআই ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকার ময়নাকুঠি কচুটারিতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৩ অক্টোবর সকালে ওই ছাত্রীকে বেড়াতে নিয়ে যান রায়হানুল। পরে পূর্বপরিচিত নগরীর বাহারকাছনা ক্যাদারেরপুল এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।

পরে ওই ছাত্রী রাত ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুনরায় সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাসায় এসে আশ্রয় চায়। পর দিন ২৪ অক্টোবর শনিবার রাতে ওই বাসায় মেঘলা তার বান্ধবী সুরভী আখতার সমাপ্তির সহযোগিতায় দুইজন যুবককে ডেকে এনে টাকার বিনিময়ে ওই ছাত্রীকে তাদের হাতে তুলে দেয়। সেখানে সে গণধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পরদিন ২৫ অক্টোবর রবিবার ওই নির্যাতিতা ছাত্রী রায়হানুলকে খুঁজতে শহরে আসে। সেখান থেকে টহল পুলিশের সন্দেহ হলে পুলিশ ওই ছাত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনা পুলিশকে জানায়। পুলিশ তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। পরে অভিযুক্তদের রংপুর ও লালমনিরহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজুসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হারাগাছ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। সোমবার মামলাটি হারাগাছ থানা থেকে রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়।

রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, রায়হানুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।