২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২০
কোন গনপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। বরং সুস্থ অবস্থায় রায়হান ও আরও একজনকে ধরে আনে পুলিশ। তারা দুইজন পুলিশের তাড়া খেয়ে নিজেকে বাঁচাতে কাস্টঘর এলাকার সুইপার কলোনির সুরাইলালের ঘরে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সুরাইলাল নিজেই।
প্রত্যক্ষদর্শী সুরাইলাল জানান, ‘রাত আনুমানিক ৩ টা। এসময় বাইরে থেকে কেউ আমার ঘরের দেয়ালে ধাক্কাচ্ছে আর দরজা খোলার জন্য ডাকছে শুনে আমি দরজা খুলি। দরজা খুলতে না খুলতে দুইজন মানুষ আমার ঘরের ভিতরে ঢুকে গেছে এর পিছনেই পুলিশ এসেছে। এসে তাদের ধরে নিয়ে গেছে। এই দুইজনের একজন রায়হান। আর অন্য একজন কে তা জানি না। এসময় কোন গণপিটুনি হয়নি। কেন ধরে নিয়ে গেছে তাও জানি না।’
প্রত্যক্ষদর্শী সুরাইলালের ভাষ্যমতে রায়হানসহ আরও একজনকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ধরে আনা হলেও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এখনো এটিকে কর্তব্যে গাফিলতি হিসেবেই বিবেচনা করছে। তারা নির্যাতনে মৃত্যু বলতে নারাজ। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আজবাহার আলী শেখ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি মিডিয়ার দায়িত্বে যিনি আছেন উনার সাথে যোগাযোগ করেন।’
আর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘আপাতত তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তে তাদের বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের গাফিলতি থাকায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে,’
প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য যেখানে রায়হানকে সুস্থ অবস্থায় ধরে আনা হয়েছে সেখানে তার মৃত্যুতে এখনও কেন কেবল গাফিলতিটাকেই বিবেচনা করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আছে। আমি আপাতত কিছু বলতে চাইছি না। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে রোববার (১১ অক্টোবর) সকাল সারে ১০ টার দিকে প্রথমে রায়হানের মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারকে জানানো হলে তাৎক্ষণিক সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ‘ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে’ বলে জানানো হলেও পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে’ বলে অভিযোগ আসে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ‘রাত সাড়ে ৪ টার দিকে ০১৭৮৩৫৬১১১১ নম্বর থেকে তার পালক পিতা ও চাচা হাবিবুল্লাহর কাছে একটি ফোন আসে। এসময় রায়হান কান্না করে অপর প্রান্ত থেকে চাচাকে ৩/৪ হাজার টাকা নিয়ে তাকে বাঁচাতে বলেন। তা না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। বলেন, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যাওয়ার জন্য। পরে চাচা হাবিব উল্লাহ তাৎক্ষণিক বন্দরবাজার ফাঁড়িতে গেলে সাদা পোশাকের একজন পুলিশ জানান- রায়হান ঘুমে আছেন। আর যে পুলিশ অফিসার তাকে ফাঁড়িতে এনেছেন তিনিও ঘুমে। তাই সকাল ৯ টার পরে আসতে বলেন এবং টাকা ১০ হাজার নিয়ে যেতেও বলা হয়। এরপর সকাল পৌনে ১০টায় রায়হানের চাচা টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে গেলে সেখান থেকে জানানো হয় রায়হানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই তাকে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তখন রায়হানের চাচা ওসমানী মেডিকেলে আসলে প্রায় সাড়ে ১০ টার দিকে রায়হানের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়।’
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে গণপিটুনির ঘটনাস্থল হিসেবে কাস্টঘর উল্লেখ করা হলে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে সরেজমিন গিয়ে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও কাস্টঘর এলাকায় কোন গনপিটুনির তথ্য কেউ দিতে পারেননি।
এমনকি নগরের কাষ্টঘর এলাকা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই এলাকার পুরোটাই সিসিটিভির আওতাভুক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটর রয়েছে ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিমের কার্যালয়ে।
কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম বলেন, আমাদের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি। এমনকি এখানে কোন চিৎকার চেঁচামেচির ঘটনাও ঘটেনি।
এদিকে রায়হানের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার দিন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এলাকাবাসী। পরে চাপের মুখে এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।
যদিও এখনো পুলিশ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এটিকে নির্যাতনে মৃত্যু মানতে নারাজ। বরং কর্তব্যে গাফিলতি হিসেবেই বিবেচনা করছেন। এ কমিটির সিদ্ধান্তে সোমবার চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত চার পুলিশ সদস্য হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। আর প্রত্যাহার তিন পুলিশ সদস্য হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আকতার তান্নি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এ মামলায় কাউকে কোন আসামি করা হয়নি।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D